পাক-ভারত রণক্ষেত্রে আসল পরীক্ষায় পাশ করে গেলো চীনের সামরিক প্রযুক্তি

পাক-ভারত রণক্ষেত্রে আসল পরীক্ষায় পাশ করে গেলো চীনের সামরিক প্রযুক্তি
গত ২৩ মার্চ ইসলামাবাদে পাকিস্তানের জাতীয় দিবসের কুচকাওয়াজের সময় পাকিস্তান বিমান বাহিনীর জে-১০ জঙ্গি বিমানের ফ্লাইপাস্ট। ছবি: সংগৃহীত

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক সংঘাত বিশ্বের সামনে প্রমাণিত পশ্চিমা হার্ডওয়্যারের বিরুদ্ধে উন্নত চীনা সামরিক প্রযুক্তি কীভাবে কাজ করে তার প্রথম বাস্তব প্রমাণ হাজির করেছে।

আর এতেই, চীনের এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রি কর্পোরেশন অব চায়না (এভিআইসি)’র তৈরি চেংডু এয়ারক্রাফটের শেয়ার দর রাতারাতি ৪০% বেড়েছে। গত বুধবার এক ডগফাইটে ভারতের ব্যবহার করা ফ্রান্সের তৈরি অত্যাধুনিক জেট রাফায়েল ভূপাতিত করতে এভিআইসি’র নির্মিত জে-১০সি ব্যবহার করা হয়েছে বলে পাকিস্তান দাবি করার পর এই পরিস্থিতি তৈরি হয়।

ভারত পাকিস্তানের দাবির কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি বা জঙ্গীবিমান হারানোর কথা স্বীকারও করেনি। তবে, পাকিস্তানের প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী চীন সম্ভবত তার অস্ত্র ব্যবস্থা বাস্তব যুদ্ধে কেমন পারফর্ম করে এবং এর সম্ভাবনাই বা কেমন তা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।

উদীয়মান সামরিক পরাশক্তি, চীন চার দশকেরও বেশি সময় ধরে কোনও বড় যুদ্ধে অংশ নেয়নি। তবে নেতা শি জিনপিংয়ের নেতৃত্বে দেশটি তার সশস্ত্র বাহিনীকে আধুনিকীকরণের পেছনে ছুটছে। অত্যাধুনিক অস্ত্র এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তির উন্নয়নে অকাতরে অর্থ ব্যয় করছে।

বেইজিং তারা “লৌহদৃঢ় সম্পর্কের ভাই’ পাকিস্তানেও সেই আধুনিকীকরণ উদ্যোগ সম্প্রসারিত করেছে।

স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (সিপ্রি) বলছে, গত পাঁচ বছরে পাকিস্তানের আমদানি করা অস্ত্রের ৮১% সরবরাহ করেছে চীন।

এসব অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে উন্নত জঙ্গীবিমান, ক্ষেপণাস্ত্র, রাডার এবং বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। বিশেষজ্ঞদের মতে, পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে যেকোনো সামরিক সংঘাতে এসব অস্ত্রই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। চীনের সহায়তায় পাকিস্তান নিজেও কিছু অস্ত্র তৈরি করছে।

লন্ডনভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক এশিয়া-প্যাসিফিক ফাউন্ডেশনের আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা পরিচালক সজ্জন গোহেল বলেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যেকোনো যুদ্ধ চীনা সামরিক প্রযুক্তির বাস্তব পরীক্ষা ক্ষেত্র হতে পারে।

চীনা ও পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী যৌথভাবে বিমান, সমুদ্র এবং স্থলভাগে সফিসটিকেটেড মহড়ায়ও অংশগ্রহণ করছে। এসব মহড়ায় যুদ্ধের সিমুলেশন এবং এমনকি ক্রু-সোয়াপিং (জনশক্তি অদলবদল) করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক ফাউন্ডেশন ফর ডিফেন্স অফ ডেমোক্রেসির সিনিয়র ফেলো ক্রেগ সিঙ্গেলটন বলেন, “বেইজিং দীর্ঘদিন ধরে ইসলামাবাদকে হার্ডওয়্যার, প্রশিক্ষণ এবং ক্রমবর্ধমান কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-চালিত টার্গেটিং সহায়তার মাধ্যমে নীরবে কৌশলগত ভারসাম্য বদলে দিয়েছে।”

“এটি এখন কেবল দ্বিপাক্ষিক সংঘর্ষ নয়; এটি চীনা প্রতিরক্ষা রপ্তানি কীভাবে আঞ্চলিক প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বদলে দিচ্ছে তারও একটি আভাস দিচ্ছে।”

কাশ্মীরে পর্যটক হত্যাকাণ্ডের পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার কারণে এই পরিবর্তনটি ভালোভাবে নজরে আসছে, যা এই অঞ্চলে একটি বৃহত্তর ভূ-রাজনৈতিক পুনর্বিন্যাসকে তুলে ধরে, যেখানে আমেরিকান প্রভাবের বিরুদ্ধে চীন একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

১৯৪৭ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে ভারত ও পাকিস্তান তিনবার কাশ্মীর নিয়ে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। শীতল যুদ্ধ তুঙ্গে থাকাকালীন, সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল ভারতের সমর্থক। আর পাকিস্তানকে সমর্থন করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। এখন, পারমাণবিক অস্ত্রধারী এই দক্ষিণ এশীয় প্রতিবেশীদের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতকে ঘিরে পরাশক্তিগুলোর প্রতিদ্বন্দ্বিতার এক নতুন যুগের সূচনা হচ্ছে।

সিএনএন থেকে অনুবাদ