শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি অনুরা কুমারা দিসানায়েকের ভারত সফরের সময় কিছু ভারতীয় মিডিয়া আউটলেট এই সফরকে চীন ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে বিরোধ হিসেবে চিত্রায়িত করার প্রয়াস পায়। ভারতীয় মিডিয়ার এই কর্মকাণ্ডকে বিশেষজ্ঞরা জিরো-সাম ম্যান্টালিটি বা নিজের লাভ না হলেও অন্যের ক্ষতি করার মানসিকতা হিসেবে অভিহিত করেন। তাদের মতে, ভারতীয় মিডিয়ার এ ধরনের আচরণ পরিবর্তন করা উচিত। এই মানসিকতা ভারতের ছোট প্রতিবেশী দেশগুলোর উন্নয়ন স্বার্থকে স্পষ্টভাবে উপেক্ষা করে।
সম্প্রতি নির্বাচিত শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট তার প্রথম বিদেশ সফরে ভারতে গিয়েছেন। সফর নিয়ে এক প্রতিবেদনে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস উল্লেখ করেছে যে “ভারত শ্রীলঙ্কার নিকটতম প্রতিবেশী। তাই প্রেসিডেন্ট দিসানায়েকে ভারতের নিরাপত্তার পাশাপাশি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য ক্ষতিকারক কোনো উপায়ে তার ভূখণ্ড ব্যবহার করার অনুমতি দেয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন”।
এই বক্তব্য ভারত মহাসাগর অঞ্চলে চীনের কার্যকলাপের প্রতি সুক্ষ্ম ইংগিত। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে প্রেসিডেন্টের বক্তব্যে শ্রীলঙ্কায় চীনা জাহাজের সফর এবং দ্বীপ রাষ্ট্রের হাম্বানতোতা বন্দর উন্নয়নে চীনের সহযোগিতার প্রতি এতে ইংগিত করা হয়েছে।
সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজি ইনস্টিটিউটের গবেষণা বিভাগের পরিচালক কিয়ান ফেং বলেন, “কিছু ভারতীয় মিডিয়া আউটলেটের এই মানসিকতা পুরানো। তারা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে তাদের প্রভাবের একচেটিয়া ক্ষেত্র হিসাবে বিবেচনা করে এবং প্রায়ই দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সাথে চীনের বৈধ সহযোগিতার সমালোচনা করে।” তিনি মঙ্গলবার গ্লোবাল টাইমসের সঙ্গে আলাপকালে উল্লেখ করেন যে এই ধরনের বাগাড়ম্বর বৈশ্বিক উন্নয়ন প্রবণতার সাথে সাংঘর্ষিক এবং এটা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সার্বভৌম কূটনৈতিক অধিকার লঙ্ঘন করে।
শ্রীলঙ্কা বেশ কয়েক বছর ধরে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) কাঠামোর আওতায় চীনের সাথে সহযোগিতা করছে। কিয়ান বলেন, তাই, দিসানায়েকের একটি ভারসাম্যপূর্ণ এবং বাস্তবসম্মত পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি চীনের সাথে সম্পর্ক জোরদার করার জন্য একটি সহযোগিতামূলক এবং বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করবেন। নির্বাচনের পর দিসানায়েকে চীন ও ভারত উভয়ের সাথে সম্পর্ক জোরদার করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন বলে জার্মান মিডিয়া ডিডব্লিউ এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে।
কিয়ান বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশ কেন ভারত থেকে নিজেদেরকে ক্রমেই দূরে সরিয়ে নিয়েছে এমনকি ভারতের বিরোধিতা করছে তা ভারতীয় মিডিয়ার বোঝা উচিত। ভারতীয় মিডিয়ার এ ধরনে মনোভাব অবশ্যই সমালোচনার যোগ্য কারণ এর ফলে প্রতিবেশি দেশগুলোর নাগরিক সমাজের মধ্যে অনিবার্য প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
কিয়ানের মতে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে উন্নয়নের চাহিদা ব্যাপক, যা তাদেরকে চীনের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়াতে বাধ্য করে।
বিশ্বের প্রতিটি দেশ তাদের নিজস্ব বৈদেশিক নীতি প্রণয়নের অধিকার রাখে। কিছু ভারতীয় মিডিয়া স্বাধীন বিদেশী নীতি প্রণয়নে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর অধিকার মেনে নিতে চায় না। যা তাদের জিরো-সাম মানসিকতার প্রকাশ বলে কিয়ান মনে করেন।
গ্লোবাল টাইমস থেকে অনুবাদ