চীনের সঙ্গে সীমান্ত চুক্তিতে আস্থা নেই ভারতের বিরোধীদলগুলোর

চীনের সঙ্গে সীমান্ত চুক্তিতে আস্থা নেই ভারতের বিরোধীদলগুলোর
প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় (এলএসি) একে অপরকে অভিবাদন জানাচ্ছে ভারতীয় ও চীনা সেনারা। ছবি: ভারতীয় সেনাবাহিনী/সংগৃহীত

ভারতের বিরোধী দলগুলো চীনের সাথে দেশের সাম্প্রতিক সীমান্ত চুক্তির আওতায় সম্ভাব্য ভূখণ্ড ছাড় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বেইজিংয়ের সাথে উত্তেজনা কমাতে কাজ করছে দিল্লি। বিরোধী দলগুলোর ঘোরতর সন্দেহ এ কাজ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার চীনকে অন্যায্য সুবিধা দিচ্ছে।

২০২০ সালের হিমালয় সীমান্ত সংঘর্ষের পরে সীমান্ত থেকে সৈন্যদের সরিয়ে নিতে একটি রূপরেখার ব্যাপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের ৪ ডিসেম্বর সংসদে যে বিবৃতি দেন তা এই বিতর্কের সূত্রপাত করে।

রবিবার, প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস পার্টির সিনিয়র নেতা জয়রাম রমেশ সংসদে চুক্তিটিকে ভারতের জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে বলে সমালোচনা করেছেন।

রমেশকে উদ্ধৃত করে দি হিন্দু পত্রিকা লিখে, “আমরা ২০২০ সালের এপ্রিলের স্থিতাবস্থায় ফিরে যেতে চাই … তারপরে আমরা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় (এলএসি) সৈন্য সরিয়ে নেয়া, উত্তেজনা প্রশমন এবং স্বাভাবিক ব্যবস্থাপনার দিকে নজর দেব।” চুক্তি করে ভারত চীনের কাছে ভূখণ্ড ছেড়ে দিয়েছে বলে তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেন।

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন যে বিরোধীদের চাপ সত্ত্বেও দুই এশিয়ান জায়ান্টের মধ্যে সম্পর্কের বর্তমান উষ্ণ অবস্থার পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা কম। দুই দেশ অক্টোবরের শেষ থেকে সীমান্তে দুটি অবস্থানে কয়েক বছর ধরে কার্যত মুখোমুখি অবস্থানে থাকা সৈন্য প্রত্যাহার করে আসছে।

স্বাধীন রাজনৈতিক ভাষ্যকার যশবন্ত দেশমুখ বলেন, ” কোনো অভিযোগ, যথেষ্ট প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত, এই সরকারের উপর কোন প্রভাব ফেলবে বলে আমি সত্যিই মনে করি না। সরকার যদি চীনের সাথে আলোচনায় বসার সিদ্ধান্ত নেয়, তবে তারা তা করবে এবং এই সময়ে বিরোধীরা আসলেই সরকারকে কোনো অন্যায়ের জন্য অভিযুক্ত করার অবস্থানে নেই।”

তিনি বলেন, মোদির ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) গত মাসে রাজনৈতিকভাবে কৌশলগত রাজ্য মহারাষ্ট্রের রাজ্য নির্বাচনে অপ্রত্যাশিত বিজয়ের মাধ্যমে তার ম্যান্ডেটকে শক্তিশালী করেছে। এর আগে অক্টোবরে উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য হরিয়ানায় আরেকটি বিস্ময়কর জয় লাভ করে মোদির দল।

এই পরাজয় কংগ্রেস পার্টিকে দুর্বল করেছে। তারা এর আগে বিজেপির শক্ত ঘাঁটি হিন্দি-ভাষী প্রদেশগুলিতে গুরুত্বপূর্ণ বিজয় অর্জন করছিল। যার ফলে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি তার নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায়।

দেশমুখ বলেন, “মহারাষ্ট্রে বিশাল ক্ষতির পরে আমি মনে করি বিরোধীদের, বিশেষ করে কংগ্রেসকে, বিজেপি এনডিএ সরকারের বিরুদ্ধে কোনও আনতে হলে প্রচুর মাল-মশল্লা জোগাড় করতে হবে।”

সীমান্তে শান্তি চীন-ভারত বাণিজ্য সম্পর্কের উন্নতি ঘটাবে বলে আশা জাগিয়েছে, যা সমগ্র এশিয়ায় ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে আগামী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমদানি শুল্ক বাড়ানোর হুমকির কারণে এটা গুরুত্বপূর্ণ।

সীমান্ত উত্তেজনার পর থেকে গত চার বছর ধরে ভারত ও চীনের  মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট নেই। অন্যদিকে চীনা নাগরিকদের ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে নয়াদিল্লির বাড়তি হয়রানী ইলেকট্রনিক্স-এর মতো খাতে সহযোগিতাকে বাধাগ্রস্ত করেছে।

জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকারের সহকারী অধ্যাপক উদয় চন্দ্র বলেন, চীন-ভারত সম্পর্ক উন্নতির দিকে। এটা প্রাক-মহামারী স্তরে ফিরে যাওয়া একটি ভাল সূচনা।”

উত্তেজনাপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পটভূমিতে ১৮ মাস শূন্য থাকার পর গত মে মাসে চীন ভারতে তার নতুন রাষ্ট্রদূত হিসেবে সিনিয়র কূটনীতিক জু ফেইহংকে নিযুক্ত করেছে। এরপর সরাসরি ফ্লাইট পুনরায় চালু করা উচিত। আমি আশা করি ২০২৫ সালে এটা চালু হতে পারে।”

চন্দ্র বলেন, “আমার মনে হয় না ভারতের বিরোধী দলগুলো কূটনীতির এই পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বিরোধী ঐক্য যেভাবেই হোক অধরা থেকে যায়।

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট থেকে অনুদিত