আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু: ‘পানিপাত’ শব্দটিকে যতবার শুধরে দেই, বই ছাপা হওয়ার পর দেখি ‘পানিপথ’ দাঁতমুখ খিঁচিয়ে আমাকে হুমকি দিচ্ছে। প্রুফরিডার ভাইদের কতবার বলেছি, ভ্রাতৃবন্দ, শব্দটি ‘পানিপথ’ নয়, ‘পানিপাত’, হরিয়ানার একটি জিলার নাম। কে শুনে কার কথা! আমাকে আহম্মক প্রমাণ করতে শেষপর্যন্ত ‘পানিপথ’ই ছাপা হয়। প্রুফরিডারের চোখ এড়িয়ে যদি কখনও ‘পানিপাত’ ছাপা হয়, আমি বলি, ‘আলহামদুলিল্লাহ!’
আমি নিজেও ‘পানিপথ’ পড়েছি। ক্লাস সিক্সে আমাদের ইতিহাস পড়াতেন হামিদ স্যার। ভারতে মোগল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা জহীরুদ্দিন বাবরের সেনাবাহিনী ১৫২৬ সালের ২১ এপ্রিল ‘পানিপথ’ এ ইব্রাহিম লোধির বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। যারা পাঠ্যবই লিখেন, তারা বিলক্ষণ পণ্ডিত মানুষ, তারাই যেহেতু ‘পানিপথ’ লিখেছেন, হামিদ স্যারেরই বা কি করার ছিল!
আরও যে কত ভুল শিখেছি, বড় হয়ে ভুলগুলো নিজের কাছে যখন ধরা পড়েছে, তখন লজ্জাবোধ করেছি। ‘পানিপাত’ এর ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছিল। প্রফেসর সৈয়দ সাজ্জাদ হোসাইন তার এক সহকর্মীকে বরাবর বিদ্রƒপ করতেন; কারণ তার সহকর্মী ‘চিলি’ (chile) নামের দেশটিকে বহু বছর পর্যন্ত ‘চাইলে’ লিখতেন।
সংস্কৃত মহাকাব্য মহাভারতের চরিত্রগুলোর কর্মকাণ্ডের মূল ক্ষেত্র দিল্লিসহ বর্তমান উত্তরপ্রদেশের কিছু এলাকা এবং হরিয়ানা। তবে মুখ্যত হরিয়ানা। পাণ্ডব ও কৌরবদের মধ্যে ‘কুরুক্ষেত্র’ নামে যে স্থানে যুদ্ধ সংঘটিত হয়, সেটিও হরিয়ানায় অবস্থিত। পাণ্ডব ভাইয়েরা কৌরবদের কাছে পাঁচটি গ্রাম দাবি করেছিল। প্রতিটি গ্রামের নামের শেষে ‘প্রস্থ’ থাকলেও একটি ছাড়া বাকি চারটি স্থানের বর্তমান নামের শেষাংশ ‘পাত’। যেমন: ‘পানিপাত’ (Panipat), ‘সোনিপাত’ (Sonipat), ‘বাগপাত’(Baghpat), তিলপাত’ (Tilpat)। এগুলো ছাড়াও আরও কিছু ‘পাত’ আছে। পাণ্ডবদের দাবিকৃত গ্রামগুলোর মধ্যে বর্তমানে যে স্থানটির নামের শেষে ‘পাত’ নেই, সেটি ‘ইন্দ্রপ্রস্থ’ (इंद्रप्रस्थ)। মহাভারতের ‘ইন্দ্রপ্রস্থ’ ভারতের রাজধানী দিল্লির একটি অংশ বলে ধারণা করা হয়।
জায়গাগুলো নাম:
পানিপাত (पाण्डुप्रस्थ-পাণ্ডুপ্রস্থ), সোনিপাত (सोनप्रस्थ-সো নপ্রস্থ), বাগপাত( व्याघ्रप्रस्थ-ব্যাঘ্রপ্রস্থ), তিলপাত (तिलप्रस्थ -তিলপ্রস্থ)।
প্রুফরিডার ভাইয়েরা সতর্ক হলে বাংলায় মুদ্রিত গ্রন্থাদি আরও নির্ভুল হতে পারে।
লিংক: https://www.facebook.com/share/p/12BS19ER7WH/