কোথাও, কোন একদিন…

কোথাও, কোন একদিন…

চীন থেকে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জন্য সাবমেরিন এলো। প্রধানমন্ত্রী সেটার উদ্বোধন করবেন। মিডিয়া থেকে একদল সাংবাদিকও অনুষ্ঠানে যাবেন। ঢাকাস্থ চীনা দূতাবাসের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা ফোন করে জানতে চাইলেন আমি যাচ্ছি কিনা? হেসে বলে দিলাম, আওয়ামী লীগ সরকার আমার নিরাপত্তা ছাড়পত্র দিবে না!তিনি অবাক হলেন। বললেন সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে তারা আমার যাওয়ার কথা বলতে পারেন। আমি দেশের একমাত্র প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত পত্রিকার সম্পাদক ও তাদের বন্ধু। তাতে কি? আমি তো লীগ নই রে ভাই- আমার সোজা উত্তর। বেচারা বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। অবশ্যই সংশ্লিষ্ট দফতর নিরাপত্তা ছাড়পত্র দেয়নি, কখনো আগবাড়িয়ে সেটার অনুরোধও করিনি!

আমার সম্পাদিত জার্নালে কিন্তু বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ছবি সহ বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল চীন থেকে আনা সাবমেরিনের। চীনা প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা হাসিমুখে ওইসব দিয়েছিলেন। অন্য কোন মিডিয়ায় আইএসপিআর প্রদত্ত তথ্য ও ছবির বাইরে বিশেষ কিছু একটা ছাপা হয়নি! ওসবে প্রধানমন্ত্রীর ছবি সাবমেরিনের ছবিকে ম্লান করে দিয়েছিল। অবশ্য বেশক’জন নিরাপত্তা ছাড়পত্রধারী সাংবাদিকের ফেসবুক সয়লাব হয়ে গিয়েছিল ‘সাবমেরিন ও তাঁহারা’ জাতীয় ছবিতে! এদের প্রায় সবাই সারাজীবন বাংলাদেশে শক্তিশালী কোন সশস্ত্রবাহিনীর পক্ষে ছিলেন না। বরং সশস্ত্রবাহিনী একটি অনুৎপাদনশীল খাত বলেই এঁরা বিশ্বাস করতেন! তারপরও লীগের আমলে এরাই ছিলেন চারদিকে।পুরনো একটা সাবমেরিন ছিল তাদের ও লীগের কাছে  রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের একটা উপকরণ।

চীনা প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা যখন আমাকে ছবিগুলো দিচ্ছিলেন তখন মজার একটা কথা বলেছিলেন । ‘ ডিয়ার ফ্রেন্ড, তোমাদের কে আমরা লেটেস্ট টেকনোলজি কেন দিতে পারি না তা হয়তো বুঝতে পারো। তোমাদের এখানে এমন সব এলিমেন্ট আমরা গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ও বিষয়ে দেখতে পাই যারা  তোমার দেশের স্বার্থ নয়, ভিন্ন দেশের স্বার্থ রক্ষায় বেশি তৎপর। আমাদের সামরিক সরঞ্জামের তথ্য ওরা পারলে দৌড়িয়ে জায়গা মতো দিয়ে আসে! তোমাদের সরকারও ওদের নিরাপত্তা ছাড়পত্র দিতে মুখিয়ে থাকে!’ তিনি কয়েকটি উদাহরণও‌‌ দিলেন।

শুধু কি চীনা টেকনোলজি? কোন দেশই হয়তো আমাদের উন্নত কোন প্রযুক্তি দিতে আগ্রহী হবে না। সরকার পরিবর্তন হলে পরিস্থিতির কিছুটা পরিবর্তন হয়, তবে ওইসব এলিমেন্টগুলো‌ এদিকে ওদিকে রয়ে যায়! এটাই আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় অন্যতম প্রতিবন্ধক। মরহুম প্রেসিডেন্ট জেনারেল এরশাদ একবার তাঁর বাসায় আলাপকালে আমাকে ও সিনিয়র সাংবাদিক এলাহী নেওয়াজ খানকে এমন একটা তথ্য দিয়েছিলেন যে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। মোটকথা, ছিদ্র অনেক বড়, অনেক। এভাবে হয় না।

(কয়েক বছর আগে কোন এক বিশ্ব সুপার পাওয়ারের দেশে ওদের সরকারি দাওয়াত পেয়েছিলাম সফর করার। সেখানে বিশালাকার পারমাণবিক সাবমেরিন দেখেছি একটু দূর থেকে। কিন্তু আজো আমি আমাদের দেশের নৌবাহিনীর চীনের তৈরি পুরনো মডেলের মিং ক্লাস সাবমেরিন স্বচক্ষে দেখতে পারিনি! পরিবর্তিত পরিস্থিতিতেও আগ্রহ নেই আর! সশস্ত্রবাহিনীর জন্য যতটুকু পারি খেদমত করেছি। এটা অব্যাহত থাকবে আমৃত্যু… উইথ অর উইদাউট নিরাপত্তা ছাড়পত্র!)

 

লিংক: https://www.facebook.com/share/p/1GCn3iGLoR/