শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যান এবং তারপর থেকে দিল্লিতে বসবাস করছেন। ভারতে আশ্রয় নেওয়ার তিন মাসেরও বেশি সময় হয়ে গেছে। তিনি যখন ভারতে আসেন, তখন বলা হয়েছিল যে এটি তার অস্থায়ী অবস্থান হবে কিন্তু তা হয়নি। তিনি অনেক দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু সফল হতে পারেননি। তাই ভারতে থাকতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। তবে তাকে প্রত্যর্পণের দাবিতে বাংলাদেশে আওয়াজ উঠেছে।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার শেখ হাসিনা ও তার দলের নেতাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগ এনে ইন্টারপোলের সহায়তা নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে।
হাসিনা সরকারকে জনগণের বিরুদ্ধে সহিংসতা চালানো এবং বলপ্রয়োগ করে ছাত্র আন্দোলনকে দমন করার জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে, যে সময়ে শত শত মানুষ মারা গিয়েছিল। বাংলাদেশ অনুরোধ করলে তাকে ফেরত পাঠানো হবে কিনা তা ভারতের আইনি প্রক্রিয়া এবং প্রত্যর্পণ চুক্তির উপরও নির্ভর করবে। তবে এটা সত্য যে শেখ হাসিনার জন্য এখন ভারতে বসবাস করা কঠিন হবে।
শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদের প্রাথমিক মন্তব্য ও সংবাদ প্রতিবেদনগুলো দেখলে দেখা যায়, আগস্ট মাসে তিনি বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করছেন বলে আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু সম্ভবত এই অনুরোধগুলো রক্ষা করা হয়নি।
আশ্রয় প্রত্যাখ্যান করে ব্রিটেন
আগস্ট এবং সেপ্টেম্বরে মিডিয়া রিপোর্টে বলা হয়েছে যে যুক্তরাজ্য অভিবাসন আইনের টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে তার আশ্রয়ের অনুরোধ রক্ষা করতে পারেনি। যুক্তরাষ্ট্রও আশ্রয় প্রত্যাখ্যান করে এবং তার ভিসা বাতিল করে। যুক্তরাজ্য প্রধানত তাদের অভিবাসন নীতি এবং শেখ হাসিনার মর্যাদার সঙ্গে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট জড়িত থাকায় রাজনৈতিক আশ্রয়ের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে।
কেন যুক্তরাজ্যের আইন বাধা
যুক্তরাজ্যের অভিবাসন আইনে আশ্রয়প্রার্থীদের দেশের মধ্যে থেকে আবেদন করতে হবে। অ্যাসাইলামের দাবিগুলি সাধারণত তখনই বিবেচনা করা হয় যদি কোনও ব্যক্তি বৈধভাবে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করে, যা হাসিনা করেননি, তিনি আগে ভারতে আসেন।
হাসিনার বিতর্কিত শাসনামল
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশ এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে হাসিনার বিতর্কিত শাসনামল তার আশ্রয়ের সম্ভাবনাকে জটিল করে তুলেছে। যুক্তরাজ্য সরকার তার প্রশাসনের সময় মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে চায় না ব্রিটেন।
বর্তমান অবস্থা কি?
তিনি কোন দেশে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেছেন কি না তা জানা না যায়নি। তবে এই প্রশ্ন উঠে যে কোন দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়া তার পক্ষে কঠিন হচ্ছে কিনা। বাংলাদেশ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে তার বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারির পর ইন্টারপোলকে তার বিরুদ্ধে নোটিশ জারি করতে বললে শেখ হাসিনার কষ্ট বাড়বে।
বিষয়গুলো ভারতের জন্য জটিল হতে পারে
শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেয়ার পর ভারত সরকারও জানিয়েছিল যে তার অবস্থান সাময়িক হবে। এরপর তিনি অন্য দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়ে সেখানে যাবেন। সেটা হচ্ছে বলে মনে হয় না।
বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের কারণে ভারতের অবস্থানও জটিল। হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট দলগুলোকে ক্ষুব্ধ করেছে। বাংলাদেশে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের দাবী বাড়ছে।
হাসিনাকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তরের জন্য ভারতের ওপর চাপ বাড়লে ভারতের পক্ষে তা উপেক্ষা করা কঠিন হবে। সেই পরিস্থিতি ভারতের পররাষ্ট্রনীতির জন্যও চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। এতে বাংলাদেশে ভারতবিরোধী মনোভাব ও অস্থিতিশীলতা বাড়তে পারে।
ভারত কি তাকে আর থাকতে দেবে?
ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে বিশেষ করে ঢাকার অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করছে। বিদ্যুৎ পাঠানোর জন্য নিজস্ব গ্রিড দেওয়ার জন্য ভারতের সঙ্গে একটি চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়েছে। ভারত চায় বাংলাদেশের সঙ্গে তার সম্পর্ক স্বাভাবিক হোক। তাই ভারত তাকে খুব বেশি দিন রাখতে চায় এমনটা মনে হয় না। বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে কী প্রতিক্রিয়া জানায় তা দেখার বিষয়।
দেশগুলো দ্বিধাগ্রস্ত কেন?
দেশগুলো হাসিনাকে আশ্রয় দিতে নারাজ কারণ তারা মনে করে এটা করা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের শামিল।
হাসিনা কোন দেশে আশ্রয় চাইছেন?
হাসিনা যুক্তরাষ্ট্র, ফিনল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) এবং সৌদি আরবের মতো দেশে আশ্রয় নেওয়ার কথা বিবেচনা করছেন বলে জানা গেছে।
যুক্তরাষ্ট্র এবং ফিনল্যান্ড সহ বেশ কয়েকটি দেশে হাসিনার পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে, যা তার আশ্রয় প্রক্রিয়াকে সহজতর করতে পারে। যাইহোক, বাইডেন প্রশাসনের সাথে হাসিনার সম্পর্ক টানাপোড়েন ছিল। তবে এটা সত্য যে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক আশ্রয়ের বিকল্প খোলা রয়েছে।
ইন্ডিয়া ডট কম