প্রধানমন্ত্রীর চেয়ার কলংকিত হয়েছে, বিচারালয়ে ‘মানিক’ বসেছে, প্রশাসনে মহা দুর্নীতিবাজরা কাজ করেছে, পুলিশ বিরোধী মতের মানুষ শেষ করেছে, মিডিয়া পদলেহন করে স্বৈরতন্ত্র কায়েমে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে! অতএব সব নিষিদ্ধ করে দেন!
কোন প্রধানমন্ত্রী থাকবে না! দেশ ‘পচে’ গেছে বলে দেশটাও বাতিল করে দেন! দেশ শেষ,দেশ শেষ শুনতে শুনতে শোনার দরকারটাও তখন শেষ হয়ে যাবে!
খালি সেনাবাহিনীর শেষ চান কেন?! কিছুই থাকার দরকার নাই! খালি থাকবে ‘আমি’ ও ‘আমরা’! বাকি সব ইবলিশ! ‘আমি’ ও ‘আমরা’ একমাত্র দেশপ্রেমিক, সৎ ও সর্ব রোগের চিকিৎসক! তাই নয় কি?
আপনারা র্যাব তৈরির সময় উন্মত্তের মতো ক্রসফায়ার চেয়েছেন, হাততালি দিয়েছেন। পরে সেই প্রতিষ্ঠানে যাওয়া সেনা ও পুলিশ সদস্যদের দানব বানিয়েছে রাজনৈতিক দলের চানক্যরা! আপনি আইনের শাসনের চেয়ে ক্রসফায়ারের শাসনকে বেছে নিয়েছিলেন! বিধাতা পুরোটার স্বাদ দিয়ে দিয়েছেন।
আপনারা কথায় কথায় সব কিছুতে আর্মি চান! ট্রাফিকের দায়িত্বও তাঁদের পালন করতে বলেন! আর ফুট ওভার ব্রিজ বাদ দিয়ে রাস্তা পার হন! সড়কের অর্ধেক দখল করা টং, ভ্যান, হকারের কাছ থেকে সওদা না করলে পেটের ভাত বেশিরভাগেরই কিন্তু হজম হয় না! সড়কে জ্যাম নিজেরাই লাগাবেন, আবার আর্মি চাইবেন! এটা আর্মির কাজ? তারপর আর্মি সিভিল কাজে গিয়ে পচতে থাকে! তখন আবার আপনার লেজ খাড়া হয়ে যায়!
জাতীয় পর্যারের গোয়েন্দা সংস্থায় পাকিস্তানের মতো দেশ ছাড়া কোথায় সেনাবাহিনীর লোক কাজ করে? সিআইএ, এমআই সিক্স, ‘র’- কোথায়? আর এসব প্রতিষ্ঠান কোথায় বিরোধী দলের লোকদের নিয়ে ব্যস্ত থাকে চব্বিশ ঘন্টা?
আপনাদের সব গোয়েন্দা সংস্থায় আর্মি চাই! জিজিএফআইয়ের কাজ তিন বাহিনীর বাইরে না। সেখানে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা কর্মরত থাকতে পারেন। কিন্তু আপনাদের খায়েশ হলো রাজনীতিতে নজর রাখার জন্য স্পেশাল অপস উইং খোলার! খুললেন! অফিসারদের নিয়োগ দিলেন ভাইবন্দী করে! তারা পেলো মজা! তাতেও হলো না! সব দলের আদ্যোপান্ত জেগাড় করে তারা ঘটিয়ে দিল ওয়ান ইলেভেন ! দানবটা কিন্তু আপনার তৈরি!
২০০৯ এর পর ওই সংস্থায় পুরো একটা ব্যুরোই খুলে বসলো সরকার উর্বর মস্তিষ্কের কয়েকজনের বুদ্ধিতে। ইন্টারনাল এ্যাফেয়ার্স ব্যুরো রাজনীতি দমনে নামলো মাঠে। গুম, খুন, চরিত্র হনন, বেগম জিয়ার বাসায় পর্ণ, মদ রেখে বেশরম মিডিয়াকে ডেকে এনে করলো নাটক।
বাহবা দিলো রাজনৈতিক প্রভুরা। সেনা অফিসাররা অবাক হয়ে দেখলো তাদের অতি পরিচিত সহকর্মীরা কিভাবে দানবে পরিণত হচ্ছে ! একজন সম্মানিতা নারীর মর্যাদার পক্ষে তখন কোন নারীবাদীকে যেমন নামতে দেখেনি কেউ তোমনি জড়িত কর্তারা হয়ে উঠলেন আরো ভয়ংকর।
অপর গোয়েন্দা সংস্থা যেটা দেশের মূল চোখ-কান সেই এন এস আইয়েও আপনারা সেনা অফিসারদের নিয়োগ দিয়েছেন। জেনারেল জিয়া যেখানে বেসামরিক সিজনড গোয়েন্দা কর্মকর্তা হাকিম সাহেবকে মহাপরিচালক পদে বসিয়ে, প্রশিক্ষণ দিয়ে জাতীয় একটা গোয়েন্দা সংস্থা দাঁড় করাতে চেয়েছিলেন সেখানে তার মৃত্যুর পর পাঠানো হলো সেনা অফিসারদের। বদনাম হলো চারদিকে।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুর রহিমের মতো একজন দেশপ্রেমিক অফিসারকে জেলে জীবন কাটিয়ে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু বরণ করতে হলো। কারন, তিনি এনএসআইয়ের জিজি হিসেবে সাপের লেজে পা দিয়েছিলেন।
সেনা অফিসাররা কেন রাজনৈতিক বিবেচনায় এসব গোয়েন্দা সংস্থায় গিয়ে ধরা খাবেন? কিন্তু সিস্টেমটাই তো এমন!
স্বাধীনতার পর থেকেই চলছে মানবকে দানব তৈরির প্রকল্প। বিরোধীদের দমনের জন্য রক্ষীবাহিনী বানিয়ে শুরু হলো এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং ! স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন র্যাব বানিয়ে পচানো হলো সেনা সদস্যদের।
বিচারকাজ, প্রক্রিয়া ঠিক না করে সবাই বাহাবা দিতে ছুটলো ধর মার কাটের পিছনে। ফল তো ভোগ করতে হয়েছে! সিস্টেম ঠিক না করে আমরা ছুটতে থাকি কঠিন নেতার উদাহরণের পিছনে। চাবুক মেরে, ডান্ডা মেরে সব ঠিক করার উর্বর চিন্তায় আচ্ছন্ন থাকে আমাদের মন। কথায় কথায় ডান্ডা! পরে ধরা খেয়ে চিৎকার!
ডিজিএফআইয়ের নিষিদ্ধের দাবি না করে এই প্রতিষ্ঠানটিকে রাজনীতির বাইরে তিন বাহিনীর নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে কাজে লাগানোর কথা বলুন। সশস্ত্রবাহিনীতে প্রয়োজনে ইন্টেলিজেন্স কোর তৈরির চিন্তা করুন। নো মোর পলিটিক্স দেয়ার এন্ড নো মোর ব্রাইট আইডিয়া।
এনএসআইয়ের জন্য গঠন করুন আলাদা ক্যাডার। উন্নত প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের ছড়িয়ে দিন বিশ্বে। তারা মিরাকল ঘটাতে পারবেন।
এসবিকে গড়ে তুলুন স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের আদলে। পুলিশের এই বিভাগটি কিন্তু অনেক কামেল।
সেনা সদস্যদের বেসামরিক খাতে নিয়োগ যতোটুকু সম্ভব কমানোর চিন্তা করুন যাতে তারা আর কখনোই ইচ্ছায়, অনিচ্ছায় দানবে পরিণত হতে না পারে। দুর্ধর্ষ সেনাবাহিনী গঠন তখনি সম্ভব যখন সেনাসদস্যরা নিজ পেশা নিয়ে ব্যস্ত থাকবে।
আর সিভিলিয়ানরা সিভিলাইজড না হলে কথায় কথায় সেনা মোতায়েনের দাবি তুলে লাভ নেই। সকল প্রতিষ্ঠানকে তাদের কাজ করতে দিন, তাদের সক্ষমতা গড়ে তুলতে দিন। রেল চালাবে রেলের লোকেরাই, ট্রাফিক ব্যবস্থা দেখবে পুলিশ, অপরাধী যতো বড় হোক তার বিচার করবে বিচারক – র্যাব নয়, ক্রস ফায়ার নয়। আপনার মাথায় যদি ডান্ডা তন্ত্র, ক্রসফায়ারের চিন্তা থাকে তাহলে আপনিই দানব তৈরিতে সক্রিয় সহযোগিতা করছেন।
সূত্র: ফেসবুক টাইমলাইন