ইউএস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) পরিচালক সুসান মোনারেজকে বুধবার পদত্যাগে অস্বীকৃতি জানানোর পর বরখাস্ত করেছে হোয়াইট হাউস। এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তিনি ‘প্রেসিডেন্টের কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নন’। তাই তাকে স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে সরানো হয়েছে।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য বিভাগ তার পদত্যাগের ঘোষণা দেয়। এরপর মোনারেজের আইনজীবীরা জানান, তাকে এ বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি এবং তিনি পদত্যাগ করবেন না। তাদের দাবি, মোনারেজকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে কারণ তিনি ‘অবৈজ্ঞানিক, বেপরোয়া নির্দেশনা অনুমোদন করতে ও নিবেদিতপ্রাণ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বরখাস্ত করতে’ অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তারা স্বাস্থ্যমন্ত্রী রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়রের বিরুদ্ধে ‘জনস্বাস্থ্যকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার’ করার অভিযোগও তোলেন।
হোয়াইট হাউস পরে জানায়, তাঁর আইনজীবীর বিবৃতি থেকেই স্পষ্ট যে সুসান মোনারেজ প্রেসিডেন্টের কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নন। তাই তাকে সিডিসির পরিচালক পদ থেকে সরানো হয়েছে। দীর্ঘদিন ফেডারেল সরকারের বিজ্ঞানী হিসেবে কাজ করা ড. মোনারেজকে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প সিডিসির প্রধান হিসেবে মনোনীত করেন এবং জুলাইয়ে সিনেটে দলীয় বিভাজিত ভোটে তার নিয়োগ অনুমোদিত হয়। এর আগে ট্রাম্পের প্রথম মনোনীত প্রার্থী, সাবেক রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান ডেভ ওয়েলডনকে ভ্যাকসিন ও অটিজম বিষয়ে বিতর্কিত মতের কারণে সরিয়ে নেয়া হয়েছিল।
মোনারেজের বিদায়ের ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই অন্তত তিনজন জ্যেষ্ঠ সিডিসি নেতা সংস্থা থেকে পদত্যাগ করেন। ডেবরা হাওরি, প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা, এক চিঠিতে ভ্যাকসিন নিয়ে ‘ভুল তথ্যের বিস্তার’ সম্পর্কে সতর্ক করেন এবং সংস্থার বাজেট কাটছাঁটের বিরুদ্ধেও অবস্থান নেন। ড্যানিয়েল জের্নিগান ন্যাশনাল সেন্টার ফর এমার্জিং অ্যান্ড জেনোটিক ইনফেকশাস ডিজিজেসের প্রধান ছিলেন। তিনি ‘বিভাগের বর্তমান পরিস্থিতি’ উল্লেখ করে পদত্যাগ করেন। ডিমিত্রে দাসকালাকিস ন্যাশনাল সেন্টার ফর ইমিউনাইজেশন অ্যান্ড রেসপিরেটরি ডিজিজেসের প্রধান।
তিনি জানান জনস্বাস্থ্যকে যেভাবে হাতিয়ার বানানো হচ্ছে তার কারণে তিনি আর কাজ চালিয়ে যেতে পারছেন না। এছাড়াও এনবিসি নিউজসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে জানানো হয়েছে যে ড. জেনিফার লেইডেন পাবলিক হেলথ ডাটা, নজরদারি ও প্রযুক্তি দপ্তরের পরিচালক ছিলেন। তিনিও পদত্যাগ করেছেন। এ ধারাবাহিক পদত্যাগ এমন এক সময়ে ঘটছে যখন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা কেনেডির নেতৃত্বে টিকাদান নীতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। বুধবারই যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন নতুন কোভিড ভ্যাকসিন অনুমোদন করেছে। তবে কারা সেই টীকা পাবেন তাদের ক্ষেত্র সীমিত করা হয়েছে। ভ্যাকসিন এখন সব প্রবীণদের জন্য পাওয়া যাবে। তবে অন্তর্নিহিত স্বাস্থ্য সমস্যাহীন তরুণ প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশুদের জন্য নয়। কেনেডি এক্সে লিখেছেন, বাইডেন প্রশাসনের সময়ে সাধারণ জনগণের ওপর আরোপিত ব্যাপক বাধ্যতামূলক টিকাদানের অজুহাত হিসেবে ব্যবহৃত কোভিড ভ্যাকসিনের জরুরি ব্যবহার অনুমোদন এখন বাতিল করা হয়েছে।
ড. মোনারেজ ছিলেন ৫০ বছরে প্রথম সিডিসি পরিচালক যার চিকিৎসা বিষয়ে ডিগ্রি ছিল না। তার পটভূমি সংক্রামক রোগ গবেষণায়। এক মাসের নেতৃত্বে তিনি কর্মীদের সান্ত্বনা দিয়েছিলেন সেই ভয়াবহ ঘটনার পর, যখন আটলান্টায় সিডিসির সদর দপ্তরে এক বন্দুকধারীর হামলায় শত শত গুলি ছোড়া হয়। ওই ঘটনায় একজন পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন। বন্দুকধারী দাবি করেছিল, কোভিড ভ্যাকসিন তার ক্ষতি করেছে।
এ মাসের শুরুর দিকে সিডিসির বর্তমান ও সাবেক কর্মীরা এক খোলা চিঠি দিয়ে কেনেডির অ্যান্টি-ভ্যাকসিন বক্তব্যের মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর্মীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা উসকে দেওয়ার অভিযোগ তুলেছিলেন। মোনারেজের বিদায় আসে প্রায় এক সপ্তাহ পর, যখন সিডিসি কর্মীদের ইউনিয়ন ঘোষণা দেয় যে তারা প্রায় ৬০০ কর্মীকে ছাঁটাই করেছে। এই ব্যাপক ছাঁটাইয়ের মধ্যে ছিলেন সংক্রামক রোগ মোকাবিলা, যেমন বার্ড ফ্লু, পরিবেশগত ঝুঁকি গবেষণা এবং জনসাধারণের রেকর্ড দেখভালের সঙ্গে জড়িত কর্মীরাও।
বিবিসি