মরণপণ সীমান্ত সংঘাতের পর পাকিস্তান ও ভারতের নতুন ক্ষেপনাস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু

মরণপণ সীমান্ত সংঘাতের পর পাকিস্তান ও ভারতের নতুন ক্ষেপনাস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু
ছবি: প্রতীকী

পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে নতুন করে অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। তারা উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা হাসিলের জন্য কোটি কোটি ডলার বিনিয়োগ করছে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এই প্রবণতা দক্ষিণ এশিয়ায় ভবিষ্যৎ যুদ্ধের রূপকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করবে।

মে মাসে দুই দেশের মধ্যে চার দিনব্যাপী প্রচণ্ড যুদ্ধের পর থেকে এই প্রবণতা চোখে পড়ার মতো।

চলতি মাসের শুরুতে ভারত ঘোষণা করে যে তারা নতুন প্রতিরক্ষা প্যাকেজের অংশ হিসাবে ৮.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে আরো ১১০টি ব্রহ্মোস সুপারসনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র সংগ্রহ করবে।

ভারত সরকার আরো জানিয়েছে, তারা স্বদেশী স্মার্ট অ্যান্টি-এয়ারফিল্ড উইপন (এসএএডব্লিউ) আপগ্রেড করছে। এতে সমন্বিত এডভান্সড গাইডেন্স সিস্টেম যুক্ত করা হচ্ছে যেন ক্ষেপনাস্ত্রটি একই সঙ্গে রাশিয়ান সুখোই এসইউ-৩০এমকেআই ও ফরাসি রাফালে জঙ্গিবিমানে ব্যবহার করা যায়। আপগ্রেডেড এসএএডব্লিউ’র পাল্লা হবে প্রায় ২০০ কিলোমিটার।

এদিকে, ভারতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পাকিস্তান তার স্বাধীনতা দিবসে নতুন ‘আর্মি রকেট ফোর্স’ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছে। জাতীয় টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ বলেন, নতুন ইউনিটটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে সজ্জিত হবে এবং সেনাবাহিনীর যুদ্ধক্ষমতা বাড়াবে।

সিঙ্গাপুরের ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর পলিটিক্যাল ভায়োলেন্স অ্যান্ড টেররিজম রিসার্চের সিনিয়র অ্যাসোসিয়েট ফেলো আব্দুল বাসিত ঘটনাগুলোকেকে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে নতুন ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিযোগিতার সূচনা হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

বাসিত বলেন, সাম্প্রতিক সংক্ষিপ্ত যুদ্ধে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর পারফরমেন্স নয়াদিল্লির কল্পনাকে ছাড়িয়ে গেছে। ফলে ভারত তাদের বিমান শক্তি বাড়ানোর বদলে ক্ষেপণাস্ত্রের দিকে ঝুঁকেছে।

তিনি বলেন, ভারত মনে করে যুদ্ধে তাদের ক্ষেপণাস্ত্র বাহিনী অনেক বেশি কার্যকর ছিল। তাই, তারা ব্রহ্মোসে আরও বেশি বিনিয়োগ করছে। পাকিস্তান এখন এই ব্যবধান কমানোর চেষ্টা করছে এবং তারা দূরপাল্লার সুপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিতেও মনোনিবেশ করতে পারে।

এপ্রিলে কাশ্মীরের পহেলগামে একটি সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহত হওয়ার পর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। দিল্লি এই হামলার জন্য ইসলামাবাদকে দায়ী করে। তবে পাকিস্তান তা অস্বীকার করে।

এর জের ধরে ভারত ৭ মে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে কথিত জঙ্গি অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা চালায়। পাকিস্তানও তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখায়। পাল্টা হামলায় ভারতের ৬টি জঙ্গিবিমান ভূপাতিত হয় বলে পাকিস্তান দাবি করে। যুদ্ধে ভারত রাশিয়ার সাথে যৌথভাবে তৈরি ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে, পাকিস্তান চীনের তৈরি পিএল-১৫ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে।

দিল্লির মনোহর পারিকর ইনস্টিটিউট ফর ডিফেন্স স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যানালাইসিসের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল অজেয় লেলে বলেন, এই যুদ্ধ ভারতকে বুঝিয়ে দিয়েছে যে পাকিস্তানের সাথে ভবিষ্যতের যেকোনো সংঘর্ষে “হয় আপনাকে এমন একটি বিমান প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে হবে যা ২০০ কিলোমিটার দূর থেকে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে পারে অথবা আপনি ব্রহ্মোস ব্যবহার করুন।

তিনি আরও বলেন, পাকিস্তানের জন্য মূল বিষয় ছিল ক্ষেপণাস্ত্রের উপর গুরুত্ব দেয়া। ইসলামাবাদ চীনকে অনুকরণ করছে এবং একটি রকেট ইউনিট প্রতিষ্ঠা করছে।

দিল্লির সেন্টার ফর ল্যান্ড ওয়ারফেয়ার স্টাডিজে কর্মরত ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাকেশ শর্মার মতে, ভারতকে এখন অ্যান্টি-অ্যাক্সেস, এরিয়া ডিনাইয়াল এবং ইন্টিগ্রেটেড এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম তৈরির উপর মনোযোগ দিতে হবে।

তার মতে, এগুলো ছাড়াও ভূমি থেকে আকাশ, আকাশ থেকে আকাশ, আকাশ থেকে ভূমিতে নির্ভুল আঘাত হানার জন্য মাল্টি-ম্যাক স্পিড এবং উন্নত রাডারসহ সব ধরণের স্থিতিস্থাপক প্রযুক্তি প্রয়োজন হবে।

শর্মা আরও যোগ করেন যে ভারতের উন্নত নির্ভুল আঘাত হানার প্রযুক্তিতে একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হলো ২০০ কিলোমিটার পাল্লার আপগ্রেডেড এসএএডব্লিউ। তিনি একে আকাশ থেকে আকাশে নিপেক্ষপযোগ্য ক্রুজ ক্ষেপনাস্ত্রের ক্ষুদ্র সংস্করণ বলে মনে করেন। এটি দিয়ে ভারতীয় বিমান বাহিনী শত্রুর আকাশসীমা অতিক্রম না করেই গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারবে।

তবে, শর্মা সতর্ক করে দেন যে পাকিস্তানের প্রস্তাবিত সমন্বিত রকেট ফোর্স – চীনের অনুকরণে তৈরি এবং একে সহায়তা দেবে বেইডু উপগ্রহ সিস্টেম। এটা ভারতের জন্য গুরুতর চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।

ভারতের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র অগ্নি-৫, ৫,৫০০ থেকে ৭,০০০ কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্ত কার্যকর। অন্যদিকে, পাকিস্তানের শাহীন-৩ ক্ষেপনাস্ত্রের পাল্লা ২,৭৫০ কিলোমিটার।

দুই দেশের কাছেই স্বল্প-পাল্লার ব্যালিস্টিক এবং কৌশলগত পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রের পাশাপাশি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে।

দিল্লির অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের কৌশলগত অধ্যয়ন কর্মসূচির ফেলো অতুল কুমারের মতে, পাকিস্তানের রকেট ফোর্স হলো সাম্প্রতিক সীমান্ত সংঘর্ষে তাদের অনুভূত দুর্বলতাগুলোর প্রত্যক্ষ প্রতিক্রিয়া।

কুমার বলেন, ভারতীয় বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভালোভাবে কাজ করেছে। বেশিরভাগ পাকিস্তানি ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোনকে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। ফলে পাকিস্তান সেনাবাহিনী এই ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বিকল্প খুঁজছে।

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট থেকে অনুবাদ