প্রতিরক্ষা সম্পর্ক জোরদারে বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া এমওইউ সই

প্রতিরক্ষা সম্পর্ক জোরদারে বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া এমওইউ সই

ক্রমবর্ধমান কৌশলগত অংশীদারিত্ব জোরদারের লক্ষ্যে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দুই দেশ – বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া প্রতিরক্ষা সহযোগিতা সংক্রান্ত একটি যুগান্তকারী সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করেছে। দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা সম্পর্ক জোরদার করার ক্ষেত্রে এটি একটি বড় পদক্ষেপ বলে মনে করছেন কৌশলগত বিশেষজ্ঞরা।

মঙ্গলবার (১২ আগস্ট), বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা এবং নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কুয়ালালামপুর সফরকালে স্বাক্ষরিত আটটি চুক্তির একটি এই এমওইউ। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মোঃ তৌহিদ হোসেন এবং মালয়েশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী দাতুক সেরি মোহাম্মদ খালেদ নরদিন এতে স্বাক্ষর করেন। এই এমওইউ দুই দেশের মধ্যে সামরিক প্রশিক্ষণ, প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি, প্রতিরক্ষা-শিল্প অংশীদারিত্ব এবং যৌথ নিরাপত্তা সমন্বয়ের ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার পথ প্রশস্ত করবে।

কৌশলগত এবং অপারেশনাল সুবিধা

উভয় পক্ষের কর্মকর্তারা উল্লেখ করেছেন যে চুক্তিটি যৌথ সামরিক মহড়া, গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় এবং সামুদ্রিক নিরাপত্তা সহযোগিতা বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি করবে, যা বঙ্গোপসাগর এবং মালাক্কা প্রণালীর নিরাপত্তা রক্ষায় পারস্পরিক স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেবে।

এই এমওইউ-তে প্রতিরক্ষা উৎপাদনেও সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে, যা দুই দেশকে মূল্য-সাশ্রয়ী সরবরাহ শৃঙ্খল গড়ে তোলার সুযোগ করে দেবে। বাংলাদেশ ক্রমেই যখন তুরস্কের একটি প্রতিরক্ষা বিনিয়োগ হাব হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে, মালয়েশিয়া তখন এখন থেকে সহজে ও মূল্য-সাশ্রয়ী আধুনিক সামরিক সরঞ্জাম লাভ থেকে উপকৃত হতে পারে।

সহযোগিতার আরেকটি ক্ষেত্র হল শান্তিরক্ষা। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীতে বিশ্বের বৃহত্তম অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশের রয়েছে অতুলনীয় অপারেশনাল অভিজ্ঞতা। ফলে যৌথ প্রশিক্ষণ এবং বিনিময় কর্মসূচি থেকে মালয়েশিয়ার প্রতিরক্ষা কর্মীরা লাভবান হতে পারেন, যা বিশ্বব্যাপী শান্তি মিশনে অবদান রাখার ক্ষেত্রে তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে।

বৃহত্তর সম্পর্ক জোরদার

ইউনুসের তিন দিনের সফরকে মালয়েশিয়া-বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। প্রতিরক্ষার বাইরেও উভয় দেশ বাণিজ্য, বিনিয়োগ, মানব পুঁজি উন্নয়ন এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ে সহযোগিতা এগিয়ে নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

তাদের দ্বিমুখী বাণিজ্য সম্পর্ক বেশ শক্তিশালী। ২০২৪ সালে মালয়েশিয়া-বাংলাদেশ বাণিজ্য ৫.১% বৃদ্ধি পেয়ে ২.৯২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ মালয়েশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার এবং রপ্তানি গন্তব্য। মালয়েশিয়ার প্রধান রপ্তানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে পেট্রোলিয়াম পণ্য, পাম তেল এবং রাসায়নিক। অন্যদিকে, বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের মধ্যে রয়েছে টেক্সটাইল, জুতা, পেট্রোলিয়াম পণ্য এবং মেনুফেকচারিং পণ্য।

রোহিঙ্গা মানবিক সংকটে মালয়েশিয়া সবসময় বাংলাদেশের পাশে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়েছে, যা এই গভীরতর অংশীদারিত্বের ভিত্তিকে আরও শক্তিশালী করে।

প্রতিরক্ষা চুক্তির গভীর তাৎপর্য

বিশ্লেষকরা উল্লেখ করেছেন যে ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক স্রোতে পরিবর্তনের সময় স্বাক্ষরিত এই প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তি প্রমাণ করে উভয় দেশ কৌশলগত অংশীদারিত্বকে বৈচিত্র্যময় এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা জোরদার করতে চাইছে। এই চুক্তি বাংলাদেশকে তার প্রতিরক্ষা আধুনিকায়নের যাত্রায় একটি নির্ভরযোগ্য দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অংশীদার দিয়েছে। একই সাথে মালয়েশিয়ার জন্য তার সামুদ্রিক প্রতিরক্ষা অবস্থান শক্তিশালী করা এবং প্রতিযোগিতামূলক প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি লাভের সুযোগ সৃষ্টি করবে।

মালয়েশিয়ার কৌশলগত অবস্থান এবং প্রতিরক্ষা দক্ষতার সাথে বাংলাদেশের অপারেশনাল অভিজ্ঞতা এবং উদীয়মান প্রতিরক্ষা-শিল্প ক্ষমতার সম্মিলনে এই এমওইউ আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষায় বাস্তব অবদান রাখার জন্য অংশীদারিত্বের ইঙ্গিত দেয়।

বিডিমিলিটারিডটকম