তালেবান শাসনকে দীর্ঘায়ু দিল রাশিয়ার স্বীকৃতি

তালেবান শাসনকে দীর্ঘায়ু দিল রাশিয়ার স্বীকৃতি
৬ জুলাই কাবুলে ট্যাঙ্কের উপরে দাঁড়িয়ে শিয়া মুসলিমদের মুহররম-মিছিলের উপর নজর রাখছেন এক তালেবান সেনা। ছবি সংগৃহীত

চলতি (জুলাই) মাসেই আফগানিস্তানের তালেবান শাসনকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া প্রথম বিদেশী সরকার হলো রাশিয়া। তালেবানরা দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় ফিরে আসার প্রায় চার বছর পর এই স্বীকৃতি পেল। এই পদক্ষেপ তালেবানদের আন্তর্জাতিক বৈধতা আদায়ের পথকে প্রশস্ত করবে। একই সাথে এটা দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে স্থিতিশীল শাসকগোষ্ঠীগুলির একটি হিসাবে তাদের অবস্থান সুদৃঢ় করতে সহায়তা করবে।

ক্ষমতায় ফিরে আসার পর থেকে, তালেবান কর্মকর্তারা এই দলটিকে আগের আমলের চেয়ে অনেক মধ্যপন্থী হিসাবে উপস্থাপন করেছেন। কিন্তু তাদের এই বয়ান প্রকৃত চিত্রের বিপরীত, যার মধ্যে রয়েছে নারী ও সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে প্রমাণিত বর্বরতা এবং মেয়েদের ষষ্ঠ শ্রেণীর উপরে শিক্ষার উপর নিষেধাজ্ঞা।

তা সত্ত্বেও, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বেশিরভাগই তালেবান সরকারের সাথে যোগাযোগে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে। কিছু দেশ, বিশেষ করে আফগানিস্তানের প্রতিবেশীরা কাবুলে তাদের দূতাবাস পুনরায় চালু করেছে এবং তালেবান প্রতিনিধিদের দূতাবাস খোলার সুযোগ দিচ্ছে।

তালেবান ২০২১ সালে আবার ক্ষমতায় ফিরে আসে। এরপর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতসহ অনেক সরকার তাদের সাথে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেছে। মার্চে মার্কিন দূত অ্যাডাম বোহলার কাবুল সফর করেন। গত বছর জাতিসংঘ তালেবান নেতাদের প্রথমবারের মতো সংস্থার বার্ষিক জলবায়ু সম্মেলনে আফগানিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করার অনুমতি দেয়।

এরপরও তালেবানের সঙ্গে বিশ্বের আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়নি। রাশিয়ার এই পদক্ষেপ তালেবান শাসনকে আরও শক্তিশালী করবে। চীন বা মধ্য এশিয়ার রাজ্যগুলো রাশিয়াকে অনুসরণ না করলেও এটা ঘটবে।

এই দেশগুলো তালেবানের সাথে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করলে তা বৃহত্তর অর্থনৈতিক সহযোগিতাকে সহজতর করতে পারে। কাবুলের সঙ্গে মধ্য এশীয় অনেক দেশের বাণিজ্য সম্পর্ক ইতিমধ্যেই শক্তিশালী। আফগানিস্তান বিদ্যুতের জন্য ঐসব দেশ ও ইরানের উপর নির্ভরশীল। সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের এই প্রচেষ্টা আফগানিস্তানের জন্য আরও ইতিবাচক অর্থনৈতিক ফলাফল বয়ে আনতে পারে।

তালেবান সরকারের সাথে স্বাভাবিক সম্পর্ক আনুষ্ঠানিকভাবে সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী সহযোগিতাকেও শক্তিশালী করতে পারে – যেমন গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগি। এটা আফগানিস্তানের সবচেয়ে শক্তিশালী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট-খোরাসান (আইএস-কে) দমনে সহায়ক হবে। এরা একই সঙ্গে তালেবান, রাশিয়া এবং প্রতিবেশীদের জন্য হুমকি।

রাশিয়া ও অন্য কোনো দেশের সাথে স্বাভাবিক সম্পর্ক স্থাপনের ফলে যদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ে এবং নিরাপত্তা হুমকি কমে তাহলে এই অর্জনের জন্য তালেবান কৃতিত্ব নিতে পারবে। এতে আফগান জনগণের মধ্যে তাদের অবস্থান জোরদার হবে।

অনেক আফগান যেকোন কারণেই হোক না কেন তালেবান শাসন মেনে নিতে চাইবে না। কিন্তু রাশিয়ার স্বীকৃতি থেকে সরকার রাজনৈতিকভাবেও উৎসাহিত হবে। তালেবানের স্বৈরশাসন কার্যকর রাজনৈতিক বিরোধিতাকে বাধা দিচ্ছে। আবার, আইএস-কে সবচেয়ে বিপজ্জনক সশস্ত্র প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও তালেবানদের উৎখাত করার ক্ষমতা তাদের নেই। তালেবান-বিরোধী অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর প্রভাবও সামান্য।

৯/১১ হামলার পর দেশটির অনেক প্রতিবেশী তালেবান-বিরোধী মিলিশিয়াদের অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে সাহায্য করেছিল। কিন্তু এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কাবুলে তালেবান শাসন মেনে নিয়েছে। রাশিয়ার পদক্ষেপ এখন পর্যন্ত এই অবস্থানের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রকাশ।

তালেবানদের দমন করার জন্য বিশ্বব্যাপী অভিনেতারা এখন যা করছেন সেগুলো মূলত প্রতীকী। গত সপ্তাহে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) তালেবানের সর্বোচ্চ নেতা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা এবং প্রধান বিচারপতি আব্দুল হাকিম হাক্কানির বিরুদ্ধে নারী ও মেয়েদের নির্যাতনের জন্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। তালোবানের কোনও নেতারই এমন দেশে ভ্রমণ করার সম্ভাবনা নেই যেখানে সরকার তাদের আইসিসির কাছে হস্তান্তর করবে।

অজানা কোন কারণে ভেতর থেকে ভেঙ্গে না পরলে অদূর ভবিষ্যতে তালেবানদের ক্ষমতায থেকে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। রাশিয়ার স্বীকৃতিতে তালেবান শাসন দীর্ঘায়িত হওয়ার সম্ভাবনা আরও বেড়ে গেল।

ফরেন পলিসি থেকে অনুবাদ