ইরাক থেকে ইরান: ইসরায়েলি আধিপত্য রক্ষায় মার্কিন প্রচেষ্টা

ইরাক থেকে ইরান: ইসরায়েলি আধিপত্য রক্ষায় মার্কিন প্রচেষ্টা
ছবি: প্রতীকী

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের রেশ এখনো কাটেনি। খুবই পরিচিত একটি গেমপ্লান-যার উৎস ছিল গোপন বৈঠক, গোপন উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং আঞ্চলিক আধিপত্য ধরে রাখার জন্য যুক্তির পর যুক্তি। মধ্যপ্রাচ্যকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তাড়া করছে এগুলো।

ইসরায়েলকে অপ্রতিদ্বন্দ্বী করে তুলতে মার্কিন নীতিনির্ধারকদের ছিল দৃঢ়সংকল্প। প্রক্রিয়াটি শুরু হয় কয়েক দশক আগে, যখন ইরাকে আমেরিকান বিমান হামলার ধোঁয়া উড়ছিল।

১৯৯০ এর দশকের শেষের দিকে সিনিয়র মার্কিন সিনেটরদের একটি ছোট প্রতিনিধিদল সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) সফর করেন। তাদের সফরের পর থেকে ওই অঞ্চল চিরস্থায়ী অস্থিরতার মধ্যে বন্দী হয়। দশকের শুরুতে কুয়েতে অপারেশন ডেজার্ট স্টর্মের বন্দুক নীরব হলেও আগের শান্তি আর ফিরে আসেনি।

সহিংসতার অন্তহীন চক্রে ক্ষুব্ধ হয়ে আমিরাতের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা প্রশ্ন করেছিলেন ওয়াশিংটন কেন সাদ্দাম হোসেনকে উৎখাত করার পরও সেখানে থেকে গেছে। এক সিনেটর অকপটে জবাব দেন যে শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন তাদের উদ্দেশ্য ছিল না বরং কোনো দেশ যেন সামরিক ও প্রযুক্তিগতভাবে ইসরায়েলের সমকক্ষ হতে না পারে তার ব্যবস্থা করা।

এই বক্তব্য একসময় নব্য-রক্ষণশীলদের মতাদর্শ হিসেবে বিরাজ করলেও ওয়ান-ইলেভেনের পর তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক নীতিতে পরিণত হয়।

এর জের ধরে বিশ্বব্যাপী “সন্ত্রাস-বিরোধী যুদ্ধের” নামে পেন্টাগন পাঁচটি দেশে সামরিক হস্তক্ষেপ এবং শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের নীলনকশা তৈরি করে।

প্রথমে ছিল আফগানিস্তান। এর পরপরই সাদ্দামের কাছে গণবিধ্বংসী অস্ত্র আছে এই যুক্তিতে ২০০৩ সালে ইরাক আক্রমণ করা হয়। অথচ আগের দশকেই জাতিসংঘের পরিদর্শকদের নজরদারিতে সাদ্দামের এমন অস্ত্রাগার ধ্বংস করা হয়েছিল।

নব্য-রক্ষণশীলরা সংযুক্ত আরব আমিরাতে যে পরিকল্পনার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন সেটাই ভবিষ্যতে কাজ করেছে: লিবিয়া, সিরিয়া এবং সম্প্রতি, ইরান। এটা ছিল মূলত মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য পুনর্নির্মাণের ছক।

১৩ জুন থেকে ইরানের বিরুদ্ধে ১২ দিনের ইসরায়েলি বিমান অভিযানে সেই পরিকল্পনার প্রতিধ্বনি শোনা যায়। হামলার ন্যায্যতা দিতে বলা হয় ইরানকে পরমাণু অস্ত্র তৈরি থেকে বিরত রাখতে এটা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু বোমা পড়ার সাথে সাথে, ইসরায়েল ও ওয়াশিংটনের যুক্তি বদলে যায়: তেহরানে শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন, এমনকি ইরান রাষ্ট্র ভেঙে ফেলারও প্রস্তাব ওঠে।

ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে না বলে জাতিসংঘ পর্যবেক্ষক ও নিজস্ব গোয়েন্দাদের স্বাক্ষ্য উড়িয়ে দিয়ে ট্রাম্প দেশটির পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা ফেলেন। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু সোস্যাল মিডিয়ায় ঘোষণা করেন যে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি “বিলুপ্ত” করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পরের দিন সুর কিছুটা নরম করে ইসরায়েলের সামরিক মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফি ডিফ্রিন বলেন যে হামলার প্রকৃত ফলাফল মূল্যায়নের সময় এখনো আসেনি।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি যদিও ২৬ জুন এক সাক্ষাৎকারে বলেন যে তাদের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়ে গেছেন অভিজ্ঞ মহল।

এরপরও কূটনৈতিকভাবে সমস্যার সমাধান সম্ভব বলে অনেকে মনে করেন। এখন সম্ভবত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার বিনিময়ে ইরানকে পরমাণু সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করতে রাজি করানো যেতে পারে।

অথবা তেহরান উত্তর কোরিয়াকে মডেল হিসেবে বেছে নিতে পারে এবং আরেকটি আঘাত থেকে বাঁচতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এটা হবে আঞ্চলিক পরমাণু বিস্তার রোধের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেয়া।

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট থেকে নেয়া (সংক্ষিপ্ত)