ইরানে বাঙ্কার-বাস্টার বোমা ফেলেও স্বস্তিতে নেই ইসরায়েল

ইরানে বাঙ্কার-বাস্টার বোমা ফেলেও স্বস্তিতে নেই ইসরায়েল

ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে এতদিন ইসরায়েলের গর্বের শেষ ছিল না। বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়ার আগেই তারা নিজেদের তৈরি করা ব্যবস্থা সম্পর্কে বেশ ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে প্রচার করেছে। দেশটি এখন স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে যে যুদ্ধের প্রথম দিকে যেখানে ইরানের ৯০% ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন বাধা দিতে পেরেছে এখন সেই হার ৬০%-এর নীচে নেমে এসেছে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল  ও নিউইয়র্ক টাইমস-এর মতো পত্রিকাতে ইসারায়েলের দুর্দশা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হচ্ছে।

টার্মিনাল-ফেজ প্রিসিসিন গাইডেন্স সমৃদ্ধ ইরানের নেক্সট-জেনারেশন মিসাইগুলো খুবই নির্ভুলভাবে নিশানায় আঘাত হানছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইনরায়েলি নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, ইরানি মিসাইলে এমন একটি নেভিগেশন সিস্টেম রয়েছে যা এগুলোকে খুবই নির্ভুলভাবে পছন্দসই লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সাহায্য করে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দুশ্চিন্তাকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে ইরানের মাল্টি –ওয়ারহেড মিসাইল সিস্টেম। এতে একটি মাত্র ক্ষেপনাস্ত্র দিয়ে একাধিক টার্গেটে হামলা করা যায়। সামরিক পরিভাষায় যাকে বলে মাল্টিপল ইনডিপেনডেন্টলি টার্গেটেড রিএন্ট্রি ভেহিকেল (এমআইআরভি)। এই ব্যবস্থার কাছে বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক বিমানপ্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও অসহায়।

নিরাপত্তা সূত্রের বরাত দিয়ে ইসরায়েলি আর্মি রেডিও জানায়, এরকম একটি ক্ষেপণাস্ত্র গুশদান অঞ্চলে আঘাত হানে। ক্ষেপনাস্ত্রটি উড়ে যাওয়ার সময় কয়েকটি ওয়ারহেড নিক্ষেপ করে। এতে ইসরায়েলের পরাক্রমশালী, বহু-স্তরযুক্ত বিমান প্রতিরক্ষা কাঠামো অন্ধ হয়ে যায়।

ইসরায়েল সাম্প্রতিক যুদ্ধে বেশ কয়েকজন শীর্ষ আইআরজিসি কমান্ডারকে হত্যা করে। এরপরও ইরান প্রতিশোধমূলক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা একে “কৌশলগত ধৈর্য” বলে উল্লেখ করেছেন। এর মাধ্যমে ইরান ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ক্রমাগত দুর্বল করার জন্য উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি ব্যবহার করছে।

কর্মকর্তাটি আরও বলেন, “গত দিনে ইরান এত দ্রুত ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছে যে সেগুলো বাধাদানের প্রস্তুতি নিতে ইসরায়েল তেমন সময় পায়নি। সামনের দিনগুলোতে এই অবস্থা আরো খারাপ হতে পারে।

ইসরায়েলের স্তরযুক্ত ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায়  স্বল্প-পাল্লার হুমকির জন্য আয়রন ডোম, মাঝারি-পাল্লার জন্য ডেভিড্স স্লিং এবং দূর-পাল্লা ও বহির্মুখী হুমকি মোকাবেলার জন্য অ্যারো-২ এবং অ্যারো-৩ রয়েছে। এছাড়া ইসরায়েলকে রক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের থাড ক্ষেপনাস্ত্র মোতায়েন করে রেখেছে।

কিন্তু ইরানের ক্রমবর্ধমান আক্রমণের মুখে এসব পশ্চিমা বিমানপ্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলোর কার্যকারিতা প্রশ্নের মুখে পড়েছে।

১৩ জুন ইরানে ইসরায়েলি হামলা শুরু হওয়ার পর তেহরান প্রথমে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন পাঠিয়ে প্রতিশোধ নেয়া শুরু করে। এরপর, ফাত্তাহ-১ এবং সেজ্জিলের মতো হাইপারসনিক অস্ত্র ব্যবহার করে।

ইসারায়েলের সর্বাধুনিক ব্যবস্থা দিয়ে এই হাইপারসনিক ক্ষেপনাস্ত্রগুলো সনাক্ত করা, ট্র্যাক করা এবং আটকানো অত্যন্ত কঠিন।

ইরান শুরুর দিকে প্রতিদিন গড়ে ১৫০টি প্রজেক্টাইল নিক্ষেপ করেছে। এখন দৈনিক প্রায় তিন ডজন ক্ষেপনাস্ত্র নিক্ষেপ করছে। দেশটি এখন সংখ্যার চেয়ে ধ্বংস ক্ষমতার দিকে বেশি মনযোগ দিয়েছে।