সম্প্রতি কাশ্মির নিয়ে ভারতের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত যুদ্ধ পাকিস্তানের জন্য ‘শাপে বর’ হিসেবে দেখা দিয়েছে। যুদ্ধে বিমান বাহিনীর সাফল্য পাকিস্তানের সামনে প্রতিরক্ষা রফতানির বিশাল এক দুয়ার খুলে দিয়েছে।
ভারত গত মার্চে কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার জের ধরে পাকিস্তানে হামলা চালায়। জবাবে পাকিস্তান তার জেএফ ফাইটারের ‘১০সি’ সংস্করণ দিয়ে পাল্টা হামলা চালায়। এতে ৬টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হয় বলে ইসলামাবাদ দাবি করে। এগুলোর মধ্যে অন্তত একটি ফ্রান্সের তৈরি রাফাল ছিল বলে পশ্চিমা সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। যদিও পাকিস্তানের দাবি ছিল তারা ৩টি রাফাল ভূপাতিত করেছে।
আজারবাইজনে যে ৪০টি মাল্টিরোল ফাইটার জেট রফতানি করা হবে সেগুলো ‘জেএফ-১৭ থান্ডার’ সংস্করণের। এ লক্ষ্যে দুই দেশ ৪ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের চুক্তি সই করেছে। এটি সাম্প্রতিককালে এশিয়া অঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ প্রতিরক্ষা চুক্তি।
পাকিস্তান অ্যারোনটিক্যাল কমপ্লেক্স (পিএসি) ও চীনের চেংদু এয়ারক্রাফ্ট কর্পোরেশনের (সিএসি) যৌথভাবে তৈরি করা জেএফ-১৭ থান্ডার দামে তুলনামূলক সস্তা। ৪.৫ প্রজন্মের জেটগুলো কোন রাজনৈতিক বিধিনিষেধ ছাড়াই রফতানি করা যায়। ফলে বিশ্বব্যাপী উদীয়মান শক্তিগুলোর কাছে এই জেট ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
প্রাথমিকভাবে ১৬টি জেএফ-১৭ কেনার পরিকল্পনা ছিল আজারবাইজানের। কিন্তু আকাশযুদ্ধে রাফালের মতো পশ্চিমা প্লাটফর্মের বিরুদ্ধে জেএফের সাফল্যে দেশটি পরিকল্পনা পরিবর্তন করে।
আজারবাইজানের অর্ডার করা জেটের সবগুলোই ‘জেএফ-১৭ ব্লক-থ্রি ভেরিয়েন্ট’। এগুলো সবচেয়ে উন্নত ও রফতানি সংস্করণ। এতে রয়েছে অত্যাধুনিক এভিওনিক্স, এইএসএ রাডার, উন্নত ডেটালিংক ইন্টিগ্রেশন এবং কয়েক শ’ কিলোমিটার দূর থেকে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম ক্ষেপনাস্ত্র।
ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জেএফ জেট চীনের তৈরি পিএল-১৫ বিয়ন্ড ভিজুয়াল রেঞ্জ (বিভিআর) ক্ষেপনাস্ত্র ব্যবহার করে। সত্যিকার রণক্ষেত্রে পিএল-১৫ ক্ষেপনাস্ত্রের এটাই প্রথম সাফল্য। এগুলোর পাল্লা ৩০০ কিলোমিটারের বেশি। এগেুলো দিয়ে পাকিস্তানি পাইলটরা পাল্লার বাইরে অবস্থান করেই ভারতীয় জেটের উপর আক্রমণ চালাতে সক্ষম হয়।
এই ক্ষেপনাস্ত্র দিয়ে পাকিস্তান বিমান বাহিনী আদমপুর সীমান্ত অঞ্চলে মোতায়েন করা ভারতের একটি এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যাটারি ধ্বংস করেছে বলে জানা গেছে।
এদিকে, হিন্দুস্তান এরোনটিকস লিমিটেড – এইচএএল’র তৈরি যুদ্ধবিমান ‘তেজাস’ রফতানির জন্য ভারত দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে আসছে। সম্প্রতি তারা রয়্যাল মালয়েশিয়ান এয়ারফোর্সের কাছে এগুলো বিক্রির দরপত্রে অংশ নেয়। কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়ার এফএ-৫০ ব্লক-২০ এর কাছে তারা হেরে যায়।
আজারবাইজানের সাথে এই মেগা চুক্তি কেবল পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা কূটনীতি এবং আঞ্চলিক সফট পাওয়ারই বাড়াবে না বরং কামরায় অবস্থিত পাকিস্তান এরোনটিক্যাল কমপ্লেক্সের জন্য আর্থিক অনুঘটক হিসেবেও কাজ করবে।
সোভিয়েত যুগের যুদ্ধবিমান থেকে পরবর্তী প্রজন্মের চীনা-পাকিস্তানি যুদ্ধবিমানের দিকে অগ্রসর হচ্ছে আজারবাইজান। এতে মধ্য এশিয়ার আঞ্চলিক সামরিক ভারসাম্যেও নাটকীয় পরিবর্তন ঘটবে। বিশেষ করে, এই অন্তর্ভুক্তি ন্যাটো, রাশিয়া ও চীনের মধ্যে ক্রমবর্ধমান মেরুকরণের ইংগিত।