বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) শত বসন্ত পার করলেন মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ। যেকোনো বিশ্বনেতার জন্য এটি একটি বিরল মাইলফলক। তীক্ষ্ণ মনন ও নিরলস কর্মনীতি দিয়ে বয়সকে উপেক্ষা করেছেন এই আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকার।
মাহাথিরের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো গত কয়েকদিন ধরে জনগণের পাশাপাশি, বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বজুড়ে ভক্তদের কাছ থেকে শুভকামনায় প্লাবিত হচ্ছে। তাকে মধ্যপন্থী মুসলিম নেতৃত্বের একজন আইকন হিসেবে দেখা হয়, যিনি পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস রাখেন।
দুই দফায় প্রধানমন্ত্রী, যার ২৪ বছর ধরে রাষ্ট্র পরিচালনা মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে এক অবিস্মরণীয় ছাপ রেখেছে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেষ দিনটিও তিনি কাটিয়েছেন বরাবরের মতোই – পুত্রজায়ায় তার অফিসে, মানুষের সাথে দেখা করে, সেই সাথে দেশ গঠনে তিনি যে অবদান রেখেছেন তা নিয়ে পড়াশোনা এবং লেখালেখি করে। তার যোগ্য উত্তরসূরি কে হতে পারেন দেশটিতে সেই বিতর্ক এখনো চলছে।
তিনি এখনও নিয়মিত পড়াশুনা ও লেখালেখি করেন, ব্যায়াম করেন এবং কথা বলেন সাবলীল স্পষ্ট উচ্চারণে। তিনি প্রমাণ করেছেন যে মন ও শরীরকে সতেজ রাখার জন্য বয়স একটি সংখ্যা মাত্র।
শরীর ও মনকে সদা ব্যস্ত রেখার মধ্যেই আছে মাহাথিরের দীর্ঘ জীবনের রহস্য। তার বিচক্ষণ জীবনাচার – ’খাও, তবে পেট ভরার আগেই থেমে যাও।’ চার দশকেরও বেশি সময় ধরে ওজন ৬২ কেজিতে ধরে রাখার জন্য এই অভ্যাসকে কৃতিত্ব দেন তিনি।
সেরা রাষ্ট্রনায়ক
সৈয়দ সাদ্দিককে প্রায়শই মাহাথিরের “নাতি”বলে ডাকা হয়। ২০১৮ সালে মন্ত্রিসভায় যোগদানের সময় তার বয়স ছিল মাত্র ২৬ বছর। এটি ছিল জাতীয় রাজনীতিতে তরুণদের অংশগ্রহণের প্রতি প্রবীণ নেতার উদারতার প্রমাণ। আর সৈয়দ সাদ্দিকের মতো তরুণ নেতাদের প্রচেষ্টায় ভোটদানের বয়স ২১ থেকে কমিয়ে ১৮ করা হয়।
তিনি বলেন, আপনি মাহথিরের রাজনীতির সাথে দ্বিমত করতে পারেন কিন্তু তিনি যে দেশ-বিদেশে মালয়েশিয়ার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য এবং স্বীকৃত রাষ্ট্রনায়কদের একজন – এ কথা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না।
স্বাভাবিকভাবেই মাহাথিরের রাজনৈতিক প্রভাব কিছুটা কমেছে। তিনি ২০২২ সালের নির্বাচনে জয়ী হতে পারেননি, নিজ দলের সাথে বিচ্ছেদ ঘটেছে – তবুও মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে তার প্রভাব প্রবল। ক্ষমতায় থাকাকালে যেমন প্রতিপক্ষকে তীক্ষ্ণ মন্তব্য বাণ ও গভীর অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে বিদ্ধ করতেন, এখনো সেই অভ্যাস রয়ে গেছে। সর্বশেষ, সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআই)-এর ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের নীতির তীব্র সমালোচনা করেন তিনি।
এরপরও আনোয়ার তার এককালের রাজনৈতিক মেন্টরকে ১০০তম জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে ভোলেননি। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেন: আজিজা ও আমি দোয়া করি যেন আল্লাহ [মাহাথিরকে] সুস্থতা, মানসিক শান্তি এবং অর্থপূর্ণ জীবন কাটানোর মতো শারীরিক শক্তি দেন। তার সুস্থ ও দাতব্য জীবনধারা এই জাতির জন্য সেই উদাহরণ হয়েছে যেখানে জীবন বৃদ্ধ বয়সেও উচ্চাশায় পরিপূর্ণ।
অনেকে মাহাথিরকে বলেছিলেন প্রতি তার উত্তরসূরি আবদুল্লাহ আহমেদ বাদাবিকে অনুসরণ করতে। বাদাবি জনবিচ্ছিন্ন থেকে নীরব নির্জনতায় অবসর কাটিয়েছেন। কিন্তু মাহাথির বিশ্বাস করেন যে শাসকের সমালোচনা করা তার কর্তব্যের মধ্যেই পরে।
তিনি সম্প্রতি এক পত্রিকা সাক্ষাতকারে বলেন, মানুষ আমার কাছে তাদের সমস্যা নিয়ে আসে এবং আমাকে কিছু বলতে বলে, তাই আমি চুপ থাকতে পারি না।
তার ট্রেডমার্ক বুদ্ধি তাকে সংবাদমাধ্যমের কাছে প্রিয় করেছে। শতবর্ষের কাছাকাছি আসার সাথে সাথে তিনি তার দীর্ঘায়ু নিয়ে রসিকতা করতে পছন্দ করতেন। যখন তার সমর্থকরা তাকে “হিদুপ মাহাথির” (মাহাথির দীর্ঘজীবী হোন) বলে স্বাগত জানায়, তখন তিনি “সায়া মাসিহ হিদুপ” (আমি এখনও বেঁচে আছি) বলে ব্যঙ্গ করেন।
শতবর্ষে পা রেখে তার প্রথম কাজ ছিল বৃহস্পতিবার সকালে তার পডকাস্টে লাইভ করা এবং নিজের দীর্ঘ জীবন সম্পর্কে শ্রোতাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট থেকে অনুবাদ