মাওয়া মিষ্টি…

মাওয়া মিষ্টি…

মিষ্টি তো জীবনে অনেক খেয়েছেন। তবে যদি আজকের এই মাওয়া মিষ্টি না খেয়ে থাকেন, তবে ধরে নেয়া যায় এতদিন আসল মিষ্টির স্বাদ নেননি। বলছি মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার নিজামের মাওয়া মিষ্টির কথা।

প্রায় ৬০ বছরের পুরানো মানিকগঞ্জের এই নিজামের মিষ্টির দোকান। মিষ্টি প্রথমে চমচমের মতোই বানানো হয়। পরে এর উপরে মাওয়ার একটা আবরণ দেয়া হয়। তাই এর নাম মাওয়া মিষ্টি। আমি প্রতিবারই মিষ্টি নিয়ে পোস্ট করলে সারা বাংলাদেশে আমার খাওয়া মিষ্টিগুলোর একটি তালিকা করি। আর সেই তালিকায় চমচম জাতীয় মিষ্টির দিক দিয়ে এটা তালিকার ১নম্বরে।

এক পিস মিষ্টি নিবেন, চামচ দিয়ে মাঝখান বরাবর কাটবেন, আর এরপর আস্তে করে মুখে পুরে দিবেন। কথা দিলাম, মিষ্টি খাওয়ার পর আপনিও আমার সাথে একমত হবেন যে, হ্যা এটাই বাংলাদেশের চমচম জাতীয় মিষ্টির ক্ষেত্রে ১ নম্বর মিষ্টি। মুখে দেয়ার সাথে সাথে গলে নাই হয়ে যাবে। টেরই পাবেন না কখন খেয়ে ফেলেছেন।

আপনি টাঙ্গাইলের চমচম থেলে অথবা চমচম জাতীয় কোন মিষ্টি খেলে দেখবেন, চিনির পরিমাণ বেশি থাকে। মুখে দিলে মিষ্টি বেশি লাগার কারণে খুব বেশি খেতে পারবেন না। কিন্তু এই নিজামের মাওয়া মিষ্টিতে চিনির বদলে দুধের পরিমাণ বেশি হওয়ায়, আপনি অনায়াসে ৪-৫টা খেয়ে ফেলতে পারবেন।

এই মাওয়া মিষ্টির আরেকটা বিশেষত্ব হচ্ছে এটা আপরি ফ্রিজ ছাড়াও ৩-৪ দিন রেখে খেতে পারবেন, নষ্ট হবে না। তাই আমার সাজেশন হচ্ছে যদি কেউ এই মিষ্টি নিয়ে আসেন, তাহলে ফ্রিজে রাখবেন না। কারণ এই মিষ্টি ফ্রিজে রাখার পর খেলে আসল স্বাদ পাবেন না।

নিজামের মিষ্টির দোকানে আমার বেশ কয়েকবার যাওয়া হয়েছে। আমার একটা ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে, সেখানে ছোট একটা ভিডিও করেছি ঘিওর উপজেলা নিয়ে, চাইলে দেখে আসতে পারেন। আমার চ্যানেলেই নিজামের দুইটা শাখারই ভিডিও আছে।

তবে লাস্ট যেবার তাদের কারখানায় যাই তেরশ্রী বাজারে তখন নতুন একটা সন্দেশ খেয়েছিলাম। নাম হলো টফি সন্দেশ। বিশ্বাস করেন, এত মজার সন্দেশ আমি জীবনে খুব কমই খেয়েছি। আমি কোন খাবারেরই বেশি ওভাররেট করি না। কিন্তু এই সন্দেশটা ছিল অসাধারণ। দেখতে কিছুটা বাচ্চাদের লজেন্সের মতো লম্বাটে আর সাদা কাগজে মোড়ানো থাকে। আমার বাসা যদি ঘিওরের আশেপাশে হতো আমি আমার বাচ্চাকে দোকান থেকে চকলেট কিনে না দিয়ে প্রতিবার এটা দিতাম ১টা করে।

এই টফি সন্দেশ আপনি খেলে প্রথমে মনে হবে এটা গুড় দিয়ে বানানো। যেমনটা আমি মনে করেছিলাম, কিন্তু আসলে এটা গুড় দিয়ে বানানো না। দুধ জ্বাল দিয়ে এত ঘন করা হয় যে, টেস্ট চলে আসে গুড়ের মতো। তবে একদম হালকা পরিমাণ চিনি ব্যবহার করা হয়।

এবার আসি দামে টফি সন্দেশ প্রতি পিস ১৫ টাকা, আর কেজি ৭৫০ টাকা। এটা আমার কাছে মনে হয় ঠিক আছে। তবে মাওয়া মিষ্টি প্রতি পিস ৪০ টাকা। আর কেজি একটা ৪২০ আর একটা ৪৫০। মাওয়া মিষ্টি দুই সাইজের হয়। একটা সাইজে একটু বড়, তাই কেজিতে কম ধরে। এটার দাম ৪২০ টাকা। আর একটা সাইজে একটু ছোট, কেজিতে বেশি ধরে, তাই এটার দাম ৪৫০ টাকা। আমার কাছে মাওয়া মিষ্টির দামটা একটু বেশি মনে হয়েছে। আর একটু কম হলে ৩৫০-৩৮০, তাহলে হয়তো ঠিক ছিল। তবে স্বাদের ক্ষেত্রে কোন ছাড় নাই।

১৯৬৫ সালে মো. নিজামুদ্দিন প্রথম এই মিষ্টি তৈরি করেন ঘিওর উপজেলার তেরশ্রী বাজারে। এরপর স্বাদের কারণে এই মিষ্টির সুনাম হয়ে যায় যা আজও আমার মতো মিষ্টি পাগলদের টেনে নিয়ে যায়। মূলত এই নিজামের মিষ্টির দুইটি শাখা আছে। তেরশ্রী বাজারে হচ্ছে মূল কারখানা, আর ঘিওর উপজেলার ৭ রাস্তা মোড়ে রয়েছে এর একটি শাখা।

ঢাকা থেকে কেউ যেতে চাইলে সরাসরি ঘিওরের বাস আছে নবীনগর থেকে। বাস যেখানে থামবে সেখান থেকে ১০টাকা অটো ভাড়া ঘিওর শাখার। আর তেরশ্রী বাজারে যেতে চাইলে, ঘিওর উপজেলা থেকে ২০টাকা অটো ভাড়া দিয়ে আসতে হবে তেরশ্রী বাজারে।

আর যদি তেরশ্রী বাজারে চলেই আসেন, তাহলে মিষ্টি প্যাকেট করতে করতে ঘুরে দেখে আসতে পারেন তেরশ্রী জমিদার বাড়ি।

লিংক: https://www.facebook.com/share/p/1Gjj4LoAqS/