দক্ষিণ এশিয়ার কৌশলগত ক্যালকুলাসে এক নাটকীয় পরিবর্তন ঘটেছে। পাকিস্তান যুদ্ধক্ষেত্রে মাঝারি-পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের শাহীন-৩ মোতায়েনের ফলে আঞ্চলিক প্রতিরোধক সমীকরণে এই গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। ফলে ভারত এতদিন প্রতিবেশীর উপর আঘাত হানার ক্ষমতায় এগিয়ে রয়েছে বলে যে ধারণা পোষণ করছিল তা ভেঙ্গে গেছে। এমনকি তার পূর্বাঞ্চলের মতো দূরবর্তী এলাকার সামরিক স্থাপনাগুলোও বিশ্বাসযোগ্য পারমাণবিক হামলার আওতায়।
শাহীন-৩ হলো একটি দুই-স্তরের, কঠিন জ্বালানি চালিত মাঝারি-পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (এমআরবিএম)। পাকিস্তানের হাতে থাকা সবচেয়ে দূরপাল্লার অস্ত্র এটি, যা প্রচলিত বা পারমাণবিক ওয়ারহেড বহন করে ২,৭৫০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। গোটা ভারততো বটেই, মধ্যপ্রাচ্যের কিছু অংশ এবং উত্তর আফ্রিকাও এর আওতায়।
২০১৬ সালের মার্চ মাসে পাকিস্তানের জাতীয় দিবসের সামরিক কুচকাওয়াজের সময় প্রথম জনসম্মুখে এই ক্ষেপণাস্ত্র হাজির করা হয়। আগের বছর প্রথম এর সফল পরীক্ষা চালানো হয়। এর আগে প্রায় এক দশক গোপনে এই ক্ষেপনাস্ত্র তৈরির কাজ করে স্ট্রাটেজিক প্লানস ডিভিশন (এসপিডি) ও ন্যাশনাল ডেভলপমেন্ট কমেপ্লেক্স (এনডিসি)।
এর আগে পাকিস্তানের ঘোরি ক্ষেপনাস্ত্রগুলো ছিল তরল জ্বালানি-চালিত। কঠিন জ্বালানি ব্যবহারের কারণে শাহিন-৩ দ্রুত উৎক্ষেপন করা যায় এবং যুদ্ধক্ষেত্রে এর টিকে থাকার ক্ষমতাও বেশি। দক্ষিণ এশিয়ার মতো সম্ভাব্য পারমাণবিক রণক্ষেত্রের জন্য এই দুটি বৈশিষ্ট্য গুরুত্বপূর্ণ ।
শাহিন-৩ চীনের তৈরি ডব্লিউএস২১২০০ ট্রান্সপোর্টার ইরেক্টর লঞ্চার (টিইএল) এর মাধ্যমে উৎক্ষেপন করা হয়। ক্ষেপণাস্ত্রটি সড়কপথে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় আনা-নেয়ার সুবিধা এর পাল্টা আক্রমণের বিরুদ্ধে টিকে থাকার ক্ষমতাকে জোরদার করেছে। এটি সেকেন্ড স্ট্রাইকের জন্য বেশি উপযোগী।
রতের অগ্নি-৩ এমআরবিএম প্রতিহত করার জন্য শাহিন-৩ উন্নয়নের পরিকল্পনা করে পাকিস্তান। ভারত যেন আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ থেকে সেকেন্ড স্ট্রাইকের সুবিধা নিতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রেখেই শাহিন-৩ ডিজাইন করা হয়।
আর সে কারণেই পাকিস্তান বিমান বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত এয়ার মার্শাল শহীদ লতিফ সাফ জানিয়ে দেন, ভারতের জন্য আর কোনও নিরাপদ আশ্রয়স্থল নেই। বার্তা স্পষ্ট: যদি আপনি আমাদের আঘাত করেন, তাহলে আমরাও আপনাকে আঘাত করব।”
একই কথা বলেছেন পাকিস্তানের পারমাণবিক কমান্ডের স্থপতি অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল খালিদ কিদওয়াইয। তিনি বলেন, এসব ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা ভারতের পূর্বাঞ্চলের দ্বীপগুলোতে আঘাত হানার জন্য তৈরি। কেউ আঘাত করে পার পেয়ে যাবে সেই সুযোগ নেই।
জানা যায় এই ক্ষেপণাস্ত্রের বেগ ১৮ ম্যাক, যা রাশিয়ার তৈরি এস-৪০০ট্রায়াম্ফের মতো অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দিয়েও ঠেকানো কঠিন।
পাকিস্তার বেশ কয়েক দফা এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার পরীক্ষা চালায় এবং সেগুলো সফল হয়। ২০১৫ সালের মার্চ এবং ডিসেম্বর, ২০২১ সালের জানুয়ারি এবং ২০২২ সালের এপ্রিলে এটি উৎক্ষেপণ করে অপারেশনাল পারফরমেন্স এবং দূরপাল্লার নকশা কতটা নির্ভরযোগ্য তা যাচাই করা হয়।
শাহীন-৩ এর মাধ্যমে পাকিস্তান জানিয়ে দিয়েছে যে হিমালয় থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত এবং এখন ভারত মহাসাগর অঞ্চলেও তার প্রতিরোধ ক্ষমতা নিরঙ্কুশ।