বাংলাদেশ বিমানবাহিনী আধুনিকায়নে সেরা বিকল্প জে-১০সি

বাংলাদেশ বিমানবাহিনী আধুনিকায়নে সেরা বিকল্প জে-১০সি

অধিকৃত কাশ্মীরের পর্যটন শহর পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলাকে কেন্দ্র করে যে দিন (৭ মে) ভারত আজাদ কাশ্মীরের কয়েকটি কথিত “সন্ত্রাসী স্থাপনায়” হামলা চালায় ঠিক সেদিন বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর (বিএএফ) প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন এক সরকারি সফরে ইতালির উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন।

আইএসপিআর জানায়, ইতালির বিমানবাহিনী প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল লুকা গোরেট্টির আমন্ত্রণে এই সফর অনুষ্ঠিত হয়। ইটালিতে হাসান মাহমুদ খাঁন প্রতিরক্ষা জায়ান্ট ‘লিওনার্দোর’ তৈরি যুদ্ধ সরঞ্জাম পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি ক্যাপ্টর-ই এইএসএ রাডার সিস্টেম সজ্জিত ইউরোফাইটার ‘টাইফুন’ নিয়ে আকাশে কয়েক চক্কর দিয়ে আসেন।

বিএএফ প্রধানের এই টেস্ট ফ্লাইটটি ছিল বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে অত্যাধুনিক যুদ্ধ বিমান কেনার জন্য যে প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে তারই অংশ। আর, সম্ভাব্য সরবরাহকারী তালিকায় ফ্রান্স, চীনের পাশাপাশি ইউরোপের বহুজাতিক এরোস্পেস কনসোর্টিয়ামটির নামও রয়েছে।

টাইফুনের ককপিটে বিএএফে’র শীর্ষ কর্মকর্তার উপস্থিতি বাংলাদেশের কাছে চীনের তৈরি “ভিগোরাস ড্রাগন” নামক জেট ফাইটার জে-১০সি’র আবেদন কিছুটা কমে যাওয়ার ইংগিত বলে মনে করা যেতে পারে।

ভারতীয় হামলার জবাবে পাকিস্তান চীনের তৈরি জে-১০সি দিয়ে পাল্টা হামলা চালায়। এতে ভারতের ৬টি বিমান ঘায়েল হয়েছে বলে পাকিস্তান দাবি করে। যেগুলোর অর্ধেকই ছিল ফরাসী বিমান নির্মাতা ডসাল্টের জেট ফাইটার রাফালে।

যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশের নিরাপত্তা সূত্র পাকিস্তানের দাবি সঠিক বলে ইংগিত দিলে ৪.৫-প্রজন্মের সিঙ্গেল ইঞ্জিন মাল্টিরোল জে-১০সি জনপ্রিয়তা বিপুল বৃদ্ধি পায়। ফলে বিএএফ প্রধান ইউরোফাইটার পরিদর্শন করলেও পাক-ভারত সংক্ষিপ্ত সংঘাতের ফলাফল ঢাকার জেট ফাইটার কেনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তুলনামূলক কম মূল্য, যুদ্ধের রেকর্ড এবং বাংলাদেশের বহরে থাকা চীনা প্লাটফর্মগুলো বদলে ফেলতে জে-১০সি সবচেয়ে যুৎসই বিকল্প বলে প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

বাংলাদেশ বিমান বাহিনীকে শক্তিশালী করার পরিকল্পনায়, ২০১৫ সালে তৎকালীন বিমান বাহিনী প্রধান মার্শাল আবু এসরার রাশিয়া এবং চীন দুই দেশের জেট ফাইটারকেই কৌশলগতভাবে দুর্বল বলে বাতিল করে দেন। তিনি আঞ্চলিক হুমকি প্রতিরোধের জন্য পশ্চিমা জঙ্গি বিমান খুঁজতে শুরু করেন।

২০১৬ সালে ফার্নবোরো আন্তর্জাতিক বিমান প্রদর্শনীতে তিনি ইউরোফাইটার টাইফুনের খুঁটিনাটি পরিদর্শন করেন।

২০১৭ সালে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে তার পুরানো জঙ্গিবিমান বহর পরিবর্তনের জন্য এমআরসিএ (মাল্টিরোল কমব্যাট এয়ারক্রাফট) কর্মসূচি হাতে নেয়।

ডাসাল্টও তখন বাংলাদেশকে রাফাল সরবরাহের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের সঙ্গে রাফালের অপারেশনাল সার্ভিস তেমন ভালো না হওয়ায় ঢাকা এ ব্যাপারে আর অগ্রসর হয়নি।

এখন মনে হচ্ছে ভারতের সাথে পাকিস্তানের সংঘাতে জে-১০সি’র পারফরম্যান্স দেখার পর বাংলাদেশ বিমান বাহিনী এর ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। কারণ, উন্নত পশ্চিমা জেট ফাইটারের তুলনায় সাশ্রয়ী মূল্যের জে-১০সি’র প্রতি আগ্রহকে আরও তীব্র করে তুলেছে।

একাধিক সূত্র থেকে এমন ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে বাংলাদেশ প্রাথমিক পর্যায়ে ১৬টি জে-১০সি সংগ্রহ কবে। এগুলো দিয়ে পুরনো এফ-৭ পরিবর্তন করা হবে। এরপর আরো জে-১০ সি সংগ্রহ করা হবে।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, জে-১০সি সংগ্রহ করার পর বাংলাদেশ হবে যুদ্ধক্ষেত্রে “রাফাল কিলার” মোতায়েনকারী দক্ষিণ এশায়ার দ্বিতীয় দেশ, যা ভারত এবং মিয়ানমারসহ অন্যান্য আঞ্চলিক শক্তির কাছে একটি স্পষ্ট বার্তা পাঠাবে।

ঢাকার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কেবল তার বিমান বাহিনীর ভবিষ্যত নির্ধারণ করবে না বরং পরবর্তী দশকের জন্য দক্ষিণ এশিয়ার কৌশলগত ভারসাম্যকেও পুনর্বিন্যাস করবে।