বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়ন: নতুন আমলে নতুন ভাবনা

বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়ন: নতুন আমলে নতুন ভাবনা
প্রতীকী ছবি

গণঅভ্যুত্থানে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতন দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি বাংলাদেশের কৌশলগত, রাজনৈতিক ও সামাজিক গতিশীলতাকে বদলে দিয়েছে। দেশটির শান্তিবাদী বৈদেশিক নীতির কারণে অনেকেই মনে রাখতে চায় না যে এই অঞ্চলে পরমাণু-সজ্জিত ভারত এবং পাকিস্তানের পরে শুধুমাত্র বাংলাদেশেরই শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী রয়েছে। বাংলাদেশ সামরিক দিক দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী অপারমাণবিক রাষ্ট্র।

আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক শক্তির সাথে জোটনিরপেক্ষতা এবং কৌশলগত ভারসাম্যের নীতির পরিপ্রেক্ষিতে, বাংলাদেশের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য পেশাদার জনবল ও আধুনিক সরঞ্জাম সজ্জিত একটি সামরিক বাহিনী সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে, অর্থনৈতিক উন্নয়নকে গুরুত্ব এবং এর ফলে প্রতিরক্ষা বাজেটে তহবিলের অভাবে দেশটির সামরিক আধুনিকায়ন কখনই বাস্তবায়িত হয়নি।

২০০৯ সালে ঢাকা তার প্রথম আনুষ্ঠানিক সামরিক আধুনিকীকরণ পরিকল্পনা, ‘ফোর্সেস গোল ২০৩০’ নিয়ে যাত্রা শুরু করে। একবিংশ শতাব্দির উপযোগী একটি অত্যাধুনিক সশস্ত্র বাহিনীর চাহিদা মেটাতে একটি ঐতিহাসিক ভিত্তি তৈরি করে এই পরিকল্পনা, যা ২০১৭ সালে সংশোধন করা হয়। পরিকল্পনাটি গ্রহণের দেড় দশক পরে এসে দেখা যায় বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়েছে।

হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামল শেষ হওয়ার সাথে সাথে, মুহাম্মদ ইউনূসের নতুন অন্তর্বর্তী সরকার পুলিশ, বিচার বিভাগ এবং সংবিধানসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ খাত এবং প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কার শুরু করেছে। পূর্ববর্তী প্রশাসনের সময় গৃহীত প্রতিটি বড় পদক্ষেপ এখন সংস্কারের পথে। তাই ‘ফোর্সেস গোল ২০৩০’-এর সাফল্য ও ব্যর্থতা বর্তমান সরকার পুনর্মূল্যায়ন করবে, এটাই ধরে নেয়া যায়।

বাংলাদেশের পরিবর্তিত ভূ-রাজনৈতিক দৃশ্যপট এবং হাসিনা-পরবর্তী সময়ে নিরাপত্তা অগ্রাধিকার নির্ধারণের জন্য বর্তমান সামরিক আধুনিকীকরণ পরিকল্পনা পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন হতে পারে। এর জন্য ঢাকার চীন এবং তুরস্কের মতো প্রাথমিক অস্ত্র বিক্রেতাদের সাথে গভীর কৌশলগত সম্পর্ক রক্ষার প্রয়োজন হবে।

ফোর্সেস গোল ২০৩০এর অধীনে বাহিনী আধুনিকায়ন

ফোর্সেস গোল ২০৩০-এর প্রাথমিক উদ্দেশ্য হল সশস্ত্র বাহিনীর তিনটি বিভাগ যথা সেনা, নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনীকে আধুনিকায়ন করা। পরিকল্পনায় সামরিক গঠনের পুনর্বিন্যাস, জনশক্তি বৃদ্ধি, পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণসহ আধুনিক অস্ত্রসহ নতুন ইউনিট তৈরি, সামরিক মতবাদ সংশোধন এবং প্রযুক্তি হস্তান্তরসহ দেশীয় উৎপাদনের জন্য প্রতিরক্ষা শিল্প বেস (ডিবিআই) বাড়ানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। তাই একে, বাংলাদেশের জন্য একুশ শতকের উপযোগী সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার একটি সামগ্রিক কৌশল হিসাবে আখ্যায়িত করা যেতে পারে।

ফোর্সেস গোল ২০৩০ এর অধীনে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তার নবগঠিত যান্ত্রিক পদাতিক ইউনিটের জন্য আধুনিক রাশিয়ান বিটিআর-৮০ এবং টার্কিশ ওটোকার কোবরা আর্মার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ার (এপিসি) সংগ্রহ করেছে। আর্মার্ড কোরের জন্য চীন থেকে অত্যাধুনিক এমসিটি-২০০০ ট্যাঙ্ক এবং ভিটি-৫ লাইট ট্যাঙ্ক সংগ্রহ করা হয়। আর্টিলারি কোরে চীনা ডব্লিউএস-২২ এর পাশাপাশি তুরস্কের টিআরজি-২৩০ এবং টিআরজি-৩০০০ কাসিরগার মতো মাল্টিপল লঞ্চ রকেট সিস্টেম (এমএলআরএস) অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইনভেন্টরিতে সার্বিয়ান নোরা বি-৫২ এর মতো স্বয়ংক্রিয় আর্টিলারি সিস্টেম যুক্ত করা হয়। এয়ার ডিফেন্স আর্টিলারি (এডিএ) কোর স্বল্পপাল্লার এফএম-৯০ এয়ার ডিফেন্স সারফেস টু এয়ার মিসাইল পেয়েছে। আর্মি এভিয়েশনের জন্য তুরস্ক থেকে বায়রাক্টার টিবি-২ ড্রোন এর পাশাপাশি পশ্চিমা দুনিয়া ও রাশিয়া থেকে যথাক্রমে পরিবহন বিমান ও মাল্টিপারপাস হেলিকপ্টারের কেনা হয়েছে।

সামুদ্রিক সীমানায় ভারত ও মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আইনি বিজয়ের কারণে, বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরের একটি বড় অংশে সার্বভৌমত্ব লাভ করেছে। এটি বাংলাদেশ নৌবাহিনীর আধুনিকায়নের গুরুত্বকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ঢাকা তার সারফেস ফ্লিটের জন্য বেইজিং থেকে দুটি মিং-ক্লাস সাবমেরিন এবং টাইপ ০৫৩এইচ৩ ও টাইপ ০৫৩এইচ২ গাইডেড মিসাইল ফ্রিগেট এবং টাইপ ০৫৬ স্টিলথ-গাইডেড মিসাইল কর্ভেটের মতো জাহাজ সংগ্রহ করেছে। বাংলাদেশ তার নৌ উপস্থিতি বাড়াতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে একজোড়া ডিকমিশন কাটার কিনেছে। ২০১১ সালে বাংলাদেশ চারটি জার্মান ডর্নিয়ার ২২৮ মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্রাফ্ট (এমপিএ) এবং দুটি ইতালীয় অগাস্টা ওয়েস্টল্যান্ড মেরিটাইম হেলিকপ্টার নিয়ে নেভাল এভিয়েশন শাখা গঠন করে।

মিয়ানমার বারবার এবং আগ্রাসীভাবে বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘনের কারণে বিমান শক্তি বাড়ানোর দিকে ঢাকার মনোযোগ বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশ বিমান বাহিনী রাশিয়ান ইয়াক-১৩০ এবং চাইনিজ কে-৮-এর মতো চতুর্থ প্রজন্মের প্রশিক্ষণ জেট সংগ্রহ করেছে। এফ-৭বিজি এবং এফ-৭বিজিআই ফাইটার ইন্টারসেপ্টর বিমান বাহিনীর বহরে যুক্ত করা হয়েছে। ছোট-এলাকা প্রতিরক্ষার জন্য বিমান বাহিনী এফএম-৯০ শর্ড ক্ষেপনাস্ত্র এবং স্থল-ভিত্তিক প্রাথমিক সতর্কতা ব্যবস্থার জন্য ইতালীর কাছ থেকে অত্যাধুনিক সেলেক্স আরএটি-৩১ডিএল থ্রি-ডি নজরদারি রাডার সংগ্রহ করেছে।

ইনভেন্টরি আপগ্রেড করার পাশাপাশি, ঢাকা নতুন জনবল দিয়ে নতুন সেনা ইউনিট গঠন করছে। সম্প্রতি গঠন করা হয়েছে অ্যাডহক আর্মি এয়ার ডিফেন্স কোরের পাশাপাশি সেনাবাহিনী গত ১৫ বছরে তিনটি নতুন ৭ম, ১০ম ও ১৭তম পদাতিক ডিভিশন গঠন করেছে। দেশের একমাত্র প্যারা-কমান্ডো ব্যাটালিয়নকে ২০১৬ সালে প্যারা-কমান্ডো ব্রিগেডে উন্নীত করা হয়। বাংলাদেশ নৌবাহিনী এভিয়েশন ইউনিট চালু করে এবং বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ভ্রাম্যমান স্বল্প পাল্লার স্যাম ক্ষেপনাস্ত্র ইউনিট গঠন করে।

বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী তার সহযোগী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) এবং বাংলাদেশ অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরি (বিওএফ) এর মাধ্যমে প্রতিরক্ষা শিল্প সম্প্রসারণের দিকেও মনোনিবেশ করেছে। (বিএমটিএফ) এখন অরুনিমা ইউটিলিটি ট্রাকের মতো হালকা যান এবং (বিওএফ) বিডি-০৮ রাইফেল, ম্যানপ্যাড, রকেট এবং গ্রেনেডের মতো ছোট অস্ত্র তৈরি করছে। এই সরঞ্জামগুলো প্রাথমিকভাবে বিদেশী অংশীদারদের সাথে প্রযুক্তি স্থানান্তর চুক্তির মাধ্যমে দেশীয়ভাবে উৎপাদন করা হয়।

বাংলাদেশ নৌবাহিনীর অধীন খুলনা শিপইয়ার্ড বেশ কয়েকটি ছোট এবং হালকা সশস্ত্র অফশোর পেট্রোল ভেসেল (ওপিভি) তৈরি করেছে। এটি ভবিষ্যতে চীন বা তুরস্কের প্রযুক্তিগত সহায়তায় ফ্রিগেট এবং কর্ভেটের মতো বড় রণতরী তৈরি করতে চায়।

ফোর্সেস গোল ২০৩০ পুনর্বিবেচনা কেন?

ঢাকার অন্তর্বর্তী সরকার এখন একটি নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে বাড়তি নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। মিয়ানমারের রাখাইন ও চিন রাজ্যে বিদ্রোহীরা শক্তিশালী হয়ে ওঠায় বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। আরাকান আর্মি (এএ) নাফ নদীর এপারে বাংলাদেশীদের অপহরণ ও গুলো করে হত্যা করছে। সীমান্তের ওপারে সহিংসতা ও মিয়ানমার বাহিনীর নিপীড়ন আবারো বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে।

আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা-ভাংচুরের পরিণতিতে বাংলাদেশে ভারতবিরোধী মনোভাব বেড়ে গেছে এবং ভারতের সাথে সম্পর্কও উত্তপ্ত। অমিত শাহের মতো ভারতের ক্ষমতাসীন শীর্ষ নেতারা বাংলাদেশের পরিস্থিতি উল্লেখ করে জনসমক্ষে বাহিনীকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরে, কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ) এর মতো নন-স্টেট অ্যাক্টর থেকে অস্থিতিশীলতার হুমকি দৃশ্যমান। এরা ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উঠছে এবং বিদেশীদের কাছ থেকে এরা অস্ত্র, প্রশিক্ষণ এবং নিরাপদ আশ্রয়সহ অন্যান্য সহায়তা পাচ্ছে।

প্রতিবেশী মিয়ানমারে অস্থিতিশীলতা, ভারত থেকে প্রচারিত যুদ্ধের হুঙ্কার এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে বিদ্রোহের সম্ভাবনার জন্য বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীকে আরো শক্তিশালী হতে হবে। যাতে তারা যেকোনো বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ হুমকি প্রতিরোধ ও মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়। এই ধরনের উদ্দেশ্য সাধনে একটি শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী থাকা অতি জরুরি, যার জন্য বিদ্যমান বাহিনী ধুনিকীকায়ন পরিকল্পনা পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন।

ঢাকাকে অবশ্যই তার সমসাময়িক কিছু ত্রুটি চিহ্নিত করতে হবে এবং পরিকল্পনা উন্নত করার দিকে নজর দিতে হবে। নতুন লক্ষ্যগুলোর মধ্যে অস্ত্র আমদানিতে বৈচিত্র্য আনা, গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র ব্যবস্থা সংগ্রহ, বিস্তৃত পরিসরের প্রযুক্তি স্থানান্তর চুক্তির জন্য প্রতিরক্ষা অংশীদারদের উদ্বুদ্ধ করা, প্রতিপক্ষের তথ্য যুদ্ধ মোকাবিলা, অনিয়মিত যুদ্ধের ডকট্রিন প্রণয়ন এবং গোয়েন্দা-ভিত্তিক অপারেশন উন্নত করা অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।

এছাড়া, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের জন্য অনুরূপ আধুনিকীকরণ পরিকল্পনা প্রণয়নের মাধ্যমে আঞ্চলিক প্রতিরক্ষার দ্বিতীয় স্তরকে একীভূত করা যেতে পারে। এই দুই বাহিনী একীভূত করা প্রয়োজন কারণ তারা যুদ্ধ বা সংঘাতের সময় জাতীয় নিরাপত্তা সংকটের ক্ষেত্রে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারে থাকবে।

দেশের ক্যাডেট কলেজের মতো তৃতীয় স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বেচ্ছাসেবী প্রাথমিক সামরিক প্রশিক্ষণ চালু করা যেতে পারে। এ ধরনের কর্মসূচির মাধ্যমে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের ইউনিটগুলোও যুবদের অংশগ্রহণের জন্য সম্প্রসারিত করা যেতে পারে। এটি সশস্ত্র বাহিনীর অফিসার কোরের জন্য ভবিষ্যত জনবল তৈরি করবে এবং জাতীয় নিরাপত্তায় যুবকদের অবদান বৃদ্ধি করবে।

চীন নির্ভরতা এবং তুর্কি বিকল্প

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তরস্ক বাংলাদেশের অস্ত্রের অন্যতম প্রধান সরবরাহকারী হয়ে উঠেছে। আঙ্কারার সামরিক সরঞ্জামের শীর্ষ চারটি গন্তব্যের একটি ঢাকা। তুর্কি অস্ত্র অর্জনে ঢাকার আগ্রহ বিভিন্ন কারণে তৈরি হয়, যেমন ন্যাটো-গ্রেডের অস্ত্রের সাথে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীকে পরিচিত করা, অন্যান্য পশ্চিমা সরবরাহকারীর তুলনায় সস্তা এবং প্রযুক্তি স্থানান্তরের মাধ্যমে দেশে উৎপাদনের সুবিধা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ-তুরস্ক কৌশলগত অংশীদারিত্বে উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক উন্নয়ন ঘটেছে।

তুরস্ক বাংলাদেশে প্রাথমিক অস্ত্র রপ্তানিকারক হিসেবে চীনের অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে। যদিও চীনের শীর্ষ অবস্থান বদল করা কঠিন; ঢাকার কাছে মোট অস্ত্র বিক্রির দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি আসে বেইজিং থেকে। বাংলাদেশের সেনা অফিসাররা চীনা অস্ত্র পরিচালনায় প্রশিক্ষিত এবং চীনা সরঞ্জাম ব্যবহারে গভীরভাবে যুক্ত থাকার ঐতিহ্য রয়েছে।

তাছাড়া, বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দল এবং স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে চীনের ইতিবাচক ভাবমূর্তি এবং বাংলাদেশে ভারত-বিরোধী মনোভাব তৈরির ফলে ঢাকা ও বেইজিংয়ের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্ব আরও গভীর হতে পারে। বেইজিং থেকে মাল্টি-রোল ফাইটার এয়ারক্রাফ্টের মতো ক্রিটিক্যাল সিস্টেম কেনার কথা ভাবতে পারে ঢাকা।

ভারত ও মিয়ানমারের সাথে সম্পর্ক আরো জটিল হওয়ার সাথে সাথে বাংলাদেশের সামরিক আধুনিকীকরণ পরিকল্পনার পুনর্বিবেচনার প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য হয়ে ওঠেছে। বাংলাদেশ এ ব্যাপারে চীন ও তুরস্কের সহযোগিতা বেছে নিতে পারে। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ফলাফল যাই হোক না কেন, আঙ্কারা এবং বেইজিংয়ের সাথে কৌশলগত সম্পর্ক টেকসই বলে মনে হচ্ছে।

এই মুহূর্তে মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের কাছে ফোর্সেস গোল ২০২৩ পুনর্বিবেচনার একটি দুর্দান্ত সুযোগ এসেছে। এটি ঢাকার প্রতিরক্ষা সক্ষমতাকে শক্তিশালীকরণ, সমসাময়িক শক্তির প্রয়োজনীয়তা পূরণ এবং ঐতিহ্যগত ও অপ্রচলিত হুমকির বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ বজায় রাখবে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ও ভূ-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতেও এটি অত্যন্ত জরুরি।

দ্যা ডিপ্লোম্যাট থেকে অনুবাদ মাসুম বিল্লাহ