ফিলিপাইন বিমান বাহিনীর পাইলট হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন যে মুসলিম নারী

ফিলিপাইন বিমান বাহিনীর পাইলট হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন যে মুসলিম নারী
রোজমাওয়াত্তি রেমো

১৯৯৮ সালে রোজমাওয়াত্তি রেমো যখন প্রথমবারের মতো প্রশিক্ষণ বিমানের ককপিটে বসেছিলেন, তখন সেটা কেবল তার স্বপ্ন পূরণ ছিল না – তিনি ফিলিপাইন বিমান বাহিনীর (পিএএফ) প্রথম মহিলা মুসলিম পাইলট হয়ে ইতিহাসও সৃষ্টি করেছিলেন।

মুসলিম অধ্যুষিত দক্ষিণ ফিলিপাইনের সুলু প্রদেশের এক ঐতিহ্যবাহী পরিবারে জন্মগ্রহণ ও বেড়ে ওঠেন রেমো। এই প্রদেশ এক বছর আগেও ছিল মুসলিম অধ্যুষিত মিন্দানাওয়ের বাংসামরো স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের অংশ। সুপ্রিম কোর্টের এক আদেশ বলে সুলু এখন আলাদা একটি প্রদেশ।

রেমোর পরিবারে পুরুষ ও নারীর কর্মক্ষেত্র ছিল আলাদা। তাই বিমান বাহিনীতে যোগদান, বাড়ি থেকে প্রায় ১,০০০ কিলোমিটার দূরে গিয়ে থাকা এবং বিমান ওড়ানোর মতো তার সিদ্ধান্তগুলোকে প্রথমে কেউ মেনে নিতে চায়নি।

সম্প্রতি এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, আমার বাবা তখন একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক। তিনি চেয়েছিলেন আমিও যেন তার মতো হই। ম্যানিলা যাওয়ার আগের দিন আমি বাবাবে ফ্লাইটের কথা জানিয়েছিলাম। তিনি শুধু বললেন: তুমি তোমার ভাইদেরও ছাড়িয়ে গেছ… আমরা বেঁচে থাকতে তুমি নিজেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছ।

কিন্তু এ কথায় রেমো হতাশ হননি। তিনি বলেন, আমি যখনই সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় থাকি তখন এই শব্দগুলো আমার কানে বাজে। তারা আমাকে মনে করিয়ে দেন যেন আমি হাল না ছাড়ি।

বর্তমানে রেমো একজন কর্নেল, পিএএফের ৪১০তম মেইনটেন্যান্স উইংয়ের ডেপুটি কমান্ডার।

১৯৯২ সালে সশস্ত্র বাহিনীর উইমেন অক্সিলিয়ারি কোরে তার সামরিক জীবন শুরু। এক বছর পর অফিসার ক্যান্ডিডেট স্কুলে ভর্তি হন তিনি। ১৯৯৪ সালে তার স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পরপরই ফিলিপাইন এক

যুগান্তকারী আইন পাস করে। ফলে প্রথমবারের মতো নারীরা সেনা, নৌ ও বিমান এবং পুলিশ বাহিনীতে নেতৃত্ব দানের সুযোগ পান। আগে কেবল পুরুষদের জন্য এই পদ সংরক্ষিত ছিল।

রেমো বলেন, আমরা স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পথে ছিলাম। আমাদেরকে লটারি করতে বলা হয় এবং সৌভাগ্যবশত আমি বিমান বাহিনীতে যোগদানের সুযোগ পাই।

চার বছর পর তিনি একজন পাইলট হিসেবে প্রশিক্ষণ শুরু করেন এবং শীঘ্রই হেলিকপ্টার চালনায় বিশেষজ্ঞ হয়ে ওঠেন। তাকে পিএএফ ৫০৫তম সার্চ এন্ড রেসকিউ গ্রুপে সংযুক্ত করা হয়। তিনি প্রথমে বেল ২০৫ ও হুয়ে হেলিকপ্টার চালাতেন। পরে সামরিক পরিবহন এবং ত্রাণ কাজে ব্যবহৃত বড় আকারের সিকোরস্কি বা ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টারের কো-পাইলট হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়।

তার স্বামীও ফিলিপাইন বিমান বাহিনীর একজন পাইলট। তাদের তিনটি সন্তান রয়েছে। তিনি সবসময় সামরিক ও পারিবারিক জীবনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে চলেন।

২০০৮ সালে টাইফুন ফ্রাঙ্ক ফিলিপাইনে আঘাত হানে। তখন তিনি সেন্ট্রাল মিন্দানাওয়ে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছিলেন। এসময় যে চেতনা তাকে দায়িত্ব পালনে প্রেরণা জোগাচ্ছিল: তিনি কল্পনা করতেন যে বাড়িতে তার সন্তানেরা যেভাবে মায়ের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে ঠিক তেমনি দুর্যোগকবলিত এলাকার মানুষও হেলিকপ্টারের রোটরের শব্দ শোনার জন্য অপেক্ষা করে আছে।

তিনি বলেন, আমার যেখানে পোস্টিং হতো আমি সবসময় সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে যেতাম। তাই প্রতিবার যখনই আমি এয়ারক্রাফট থেকে নামতাম তখনই দেখতাম বাচ্চারা আমার জন্য অপেক্ষা করছে। মিশন শেষ করে আমাকে বাড়ি ফিরতে হতো… বেঁচে থাকার জন্য আমাকে সবকিছু করতে হয়েছিল।

কর্নেল রেমো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মিশনে ২০০০ ঘন্টারও বেশি হেলিকপ্টার চালিয়েছেন। তিনি ১৯৯৯ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে স্কাই-ডাইভিং প্রদর্শনীতেও অংশ নিয়েছিলেন । এ কাজেও তিনি ছিলেন প্রথম ফিলিপিনো মুসলিম মহিলা। তবে তিনি তার অর্জনগুলোকে অসাধারণ কিছু হিসেবে দেখেন না।

তিনি বলেন, আমি সবসময় আমার পা মাটিতে রাখি। যদি তোমার স্বপ্ন থাকে তাহলে তোমাকে অধ্যবসায় করতে হবে এবং তা অর্জনের উপায় খুঁজে বের করে নিতে হবে।

আরব নিউজ থেকে অনুবাদ