চীন আগামী কয়েক মাসের মধ্যে পাকিস্তান বিমান বাহিনীকে (পিএএফ) তার পরবর্তী প্রজন্মের জে-৩৫এ স্টিলথ ফাইটার সরবরাহ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা বলছেন, এতে দক্ষিণ এশিয়ায় আকাশ শক্তির ভারসাম্যে যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে।
পাকিস্তানের একজন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ওয়েবসাইট জেনস জানায়, শেনইয়াং এয়ারক্রাফ্ট কর্পোরেশনের (এসএসি) তৈরি জে-৩৫এ ফাইটারের প্রথম ব্যাচটি শীঘ্রই পাকিস্তানে পৌঁছাবে। এটা হবে কোনও বিদেশী সামরিক বাহিনীর কাছে চীনের তৈরি পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমানের প্রথম রপ্তানি।
পিএএফ পাইলটরা বর্তমানে চীনে এই যুদ্ধবিমান চালানোর প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। তবে, এ ব্যাপারে ইসলামাবাদ এবং বেইজিংয়ের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির মেয়াদ ও অন্যান্য শর্ত সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি।
এফ-৩৫ ফাইটার জেটের মতো পশ্চিমা প্লাটফর্মের বিপরীতে চীনের এই মাল্টিরোল ফাইটারগুলোকে সাশ্রয়ী বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করা হয়। পিপলস লিবারেশন আর্মি এয়ার ফোর্স (পিএলএএএফ) এখনো স্টিলথ ফাইটারগুলো ব্যবহার শুরু করেনি। তবে এগুলোকে চীনা প্রযুক্তির গুরুত্বপূর্ণ প্রদর্শক মনে করা হয়।
জে-৩৫এ-এর প্রোটোটাইপে প্রথমে রাশিয়ান আরডি-৯৩ টার্বোফ্যান ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়। জেএফ-১৭ ফাইটারে একই ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়। তবে পরবর্তী সংস্করণে চীনের নিজস্ব তৈরি ডব্লিউএস-১৩ই ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে। এই ইঞ্জিন আরো উন্নত, এর থ্রাস্ট বেশি। ফলে দূরপাল্লার মিশনে টিকে থাকার সক্ষমতাও বেশি।
এর আগে প্রতিরক্ষাবিষয়ক বিভিন্ন ওয়েবসাইটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে পাকিস্তানকে চীন আগামী বছরের শেষ দিকে জে-৩৫এ সরবরাহ করবে কথা ছিল। কিন্তু সেই সময়সীমা অন্তত ৬ মাস এগিয়ে আনা হয়েছে। আঞ্চলিক উত্তেজনা বৃদ্ধি এবং প্রতিবেশী ভারতের রাফাল এবং সু-৩০এমকেআই ফাইটারের মোকাবেলায় চীন পাকিস্তানের আকাশ যুদ্ধ ক্ষমতা দ্রুত জোরদার করার সিদ্ধান্ত নেয়।
সূত্র জানায়, পাকিস্তান ২০২৬ সালের প্রথম দিকে পঞ্চম প্রজন্মের ফাইটারের প্রথম ব্যাচ পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
জানা যায়, পাকিস্তানকে দেয়া জেটগুলো চীনের পিএল-১৭ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে সজ্জিত থাকবে। দৃষ্টিসীমার বাইরে থেকেই এসব ক্ষেপনাস্ত্র প্রতিপক্ষ বিমানের উপর আঘাত হানতে পারে। এর পাল্লা ৪০০ কিলোমিটারের বেশি।
এই ক্ষেপণাস্ত্র নিরাপদ দূরত্বে থেকে শত্রুর এওয়াক্স, আকাশে জ্বালানি ভরার ট্যাঙ্কার এবং ইলেকট্রনিক যুদ্ধ পরিচালনার প্লাটফর্মের মতো গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক বিমানগুলোকে ধ্বংস করার জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে। ফলে এআইএম-১২০ডি বা মেটেওর-এর মতো পশ্চিমা অ্যানালগ ক্ষেপনাস্ত্রের নাগালের বাইরে থেকে শত্রু বিমানের উপর আক্রমণ করা যাবে।
মাল্টি-মোড সিকার সম্বলিত এ্যাকটিভ রাডার, ইনফ্রারেড গাইডেন্স এবং মিড-কোর্স আপডেটের জন্য স্যাটেলাইট নেভিগেশনযুক্ত পিএল-১৭ ক্ষেপনাস্ত্র – চীনের পঞ্চম প্রজন্মের ফাইটারগুলোকে অতি ভয়ঙ্কর করে তুলেছে।
দক্ষিণ এশিয়ার রণক্ষেত্রে এগুলো কেবল একটি স্টিলথ এয়ার সুপিরিওরিটি ফাইটার হিসেবেই কাজ করবে না, বরং একটি দূর-পাল্লার কৌশলগত ইন্টারসেপ্টর হিসেবেও কাজ করবে। যা আকাশযুদ্ধে ভারতীয় বিমান বাহিনীর শক্তিকে গুড়িতে দিতে সক্ষম।
প্রাথমিক চুক্তি অনুযায়ী পাকিস্তান জে-৩৫এ ফাইটারের ৪০টি ইউনিট পাবে বলে জানা গেছে। ইসলামাবাদ ২০২৪ সালের প্রথম দিকে এই বিমানের প্রতি প্রথম আগ্রহ প্রকাশ করে। তখনকার বিমান বাহিনী প্রধান জহির আহমেদ বাবর জানিয়েছিলেন যে জে-৩৫এ শীঘ্রই পিএএফের অংশ হবে।
পাকিস্তান জে-৩৫এ হাতে পেলে নি:সন্দেহে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সামরিক ভারসাম্য বদলে যাবে। এটি ভারতের নিরাপত্তা ক্যালকুলাসের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।
বিশ্ব যখন স্টিলথ-ডমিনেন্ট এরিয়াল ওয়ারফেয়ারের যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে, তখন চীন-পাকিস্তান প্রতিরক্ষা অক্ষ তার যুদ্ধের সক্ষমতাকে তীক্ষ্ণ করছে। জে-৩৫এ শীঘ্রই এর সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতীক হয়ে উঠবে।