নিরাপত্তা ক্লিয়ারেন্স ও সশস্ত্রবাহিনী দিবস

নিরাপত্তা ক্লিয়ারেন্স ও সশস্ত্রবাহিনী দিবস

সশস্ত্রবাহিনী দিবসের শুভেচ্ছা। সর্বশেষ সশস্ত্রবাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে দাওয়াত পেয়েছিলাম ২০১১ সালে। এরপর থেকে আর পাইনি! নিরাপত্তা ক্লিয়ারেন্সের অজুহাতে আমার মতো শত শত অফিসারকে দাওয়াত দেয়া হয়নি! এমনকি প্রথিতযশা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের এক বড় অংশ সশস্ত্রবাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হননি! বাটপার শাহেদের মতো অনেকেই আবার সেনাকুঞ্জের অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে দাঁত বিকশিত করে নিরাপত্তা ক্লিয়ারেন্স পাওয়ার স্বাদ উপভোগ করেছেন।

দেশে প্রতিরক্ষা সাংবাদিকতা শুরু করে ও একমাত্র প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত পত্রিকাটি সম্পাদনা করেও আমাকে অপাংক্তেয় থাকতে হয়েছে। অথচ যারা লিখে,কথা বলে বাংলাদেশে শক্তিশালী সশস্ত্রবাহিনী চায়নি এবং সকল ক্ষেত্রে স্বকীয় নিরাপত্তা নীতির বিরোধিতা করেছে তাদের বেশিরভাগকেই সশস্ত্রবাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে দাওয়াত পেতে দেখেছি। এসব সশস্ত্রবাহিনীর প্রাতিষ্ঠানিক দূর্বলতা ছিল না,ছিল কতিপয় অতি উৎসাহী অফিসারের হাইপার তৎপরতার ফল। তাদের অনেকের আজ পাসপোর্ট বাতিল হতে দেখছি! তাদের বিরুদ্ধে গুম, খুনের অভিযোগ উঠতে দেখছি!কি কারনে এরা যে এমন করে?কি কারনে যে এরা ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবে না!

বিগত বিএনপি আমলে দেখতাম সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমান সেনানিবাসে অবাঞ্ছিত, জেনারেল এরশাদও তাই! তখন বিএনপির কাঁধে চড়ে বসা একদল অফিসার চারদিকে বিএনপি বিরোধী খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন! ২০০৯ সালের পর লীগ ক্ষমতায় এলে আরেকদল অফিসার করলেন তার উল্টো টা! তবে এরা গত কয়েকবছর অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করেছেন যা বিএনপি আমলে অতোটা দৃষ্টিকটু ছিল না। তখন সাধারণ অফিসারদের ঢালাওভাবে নিরাপত্তা ছাড়পত্র প্রদানে বাঁধা দেয়া হয়নি।

আমার তিন জন কোর্স মেট এখন তিন বাহিনী প্রধান যা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। জেনারেল ওয়াকারের শ্বশুর জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমানকে বিএনপির সময় যথেষ্ট হেনস্থা করা হয়েছে অস্বীকার করার উপায় নেই। ওয়ান ইলেভেনের পর জেনারেল মঈন জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমানকে আরো বেশি অপমান করেছেন। হাসপাতালের বেড থেকে স্যালাইন লাগানো অবস্থায় কোর্টে হাজির করেছেন।

ঢালাওভাবে রাজনৈতিক কারণে অফিসারদের নিরাপত্তা ছাড়পত্র বাতিল করা ও বৈষম্যের শিকারে পরিণত করা কাম্য নয়। এটা ঢালাও ক্ষোভের জন্ম দেয়, ঢালাও প্রতিহিংসার বিকাশ ঘটায়। সশস্ত্রবাহিনী জাতীয় প্রতিষ্ঠান,কোন রাজনৈতিক দলের লাঠিয়াল নয়। দেশের মানুষ ও অবসরপ্রাপ্ত অফিসারদের মধ্যে রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকবে। এটা সাংবিধানিক অধিকার। এজন্য কাউকে শত্রুতে পরিণত করা সংবিধানের লঙ্ঘন।

আর যেন কখনো সামরিক অফিসারদের সশস্ত্রবাহিনী থেকে দূরে রাখা না হয়।

(আমি দেশের বাইরে। জানি না এবারও আমার দাওয়াত কার্ড গিয়েছে কিনা? যে ঠিকানা দেয়া ছিল তা ছেড়ে চলে এসেছি‌। আমি কোন খোঁজ নেইনি। একটি চরম নিবর্তনমূলক শাসনের অবসান হয়েছে সেটাই বড় কথা। এবার দেখছি অগুনিত অফিসার অনেক বছর পর দাওয়াত পাচ্ছেন। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকারকে এজন্য আন্তরিক ধন্যবাদ। তিনি প্রতিশোধ পরায়নতাকে প্রশ্রয় দেননি। পেশাদার হিসাবে সবাইকে বিবেচনা করেছেন…)

কোরআনের সেই কথা- আমি যাকে ইচ্ছা তাকে ক্ষমতা দেই,যাকে ইচ্ছা তাকে ক্ষমতাচ্যুত করি…

 

টাইমলাইন লিংক: https://www.facebook.com/share/p/15JKpaj4VV/