বাংলাদেশ নৌ বাহিনী দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ৬টি উন্নত সংস্করণের বোগো-ক্লাস সাবমেরিন কিনতে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে আলোচনা অগ্রসর পর্যায়ে রয়েছে। সাবমেরিনগুলোর দাম পড়বে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার। প্রতিরক্ষা ওয়েবসাইট বিডি মিলিটারি এ খবর দিয়েছে।
জার্মানির টাইপ ২০৯/১৪০০ ডিজেল-ইলেকট্রিক সাবমেরিনের ডিজাইন অনুসরণ করে বোগো-ক্লাস সাবমেরিন নির্মাণ করবে দাইয়ু শিপবিল্ডিং অ্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং (ডিএসএমই)। নতুন কেনা সাবমেরিনগুলোর ঘাঁটি হবে কক্সবাজারের কাছে বাংলাদেশের নবনির্মিত সাবমেরিন বেজ বিএনএস পেকুয়া। চীনের পলি টেকনলজিস ১.২৯ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে এই ঘাঁটি নির্মাণ করে।
বিএনএস পেকুয়া হলো বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সাবমেরিন বহরের কমান্ডের হেডকোয়ার্টার। এই ঘাঁটিতে সাবমেরিন রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ড্রাইডক সুবিধাসহ আন্ডারওয়াটার প্লাটফর্ম, প্রপালসন সিস্টেম ও ব্যাটারি সাপোর্টের জন্য ওয়ার্কশপ, নিরাপদ ইলেক্ট্রনিক অবকাঠামো এবং লজিস্টিক অপারেশনের জায়গা রয়েছে। এই ঘাঁটির নিরাপত্তা রক্ষায় কোস্টাল সারভেইল্যান্স রাডার ও পেরিমিটার সিকিউরিটি সিস্টেম রয়েছে। এটা এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যেন সাবমেরিন বহরকে দ্রুত মেরামত এবং অপারেশনের জন্য প্রস্তুত করা যায়।
কক্সবাজারের কাছে কৌশলগত স্থানে অবস্থিত এই ঘাঁটি থেকে বাংলাদেশ নৌবাহিনী দ্রুত দেশের পূর্বাঞ্চলীয় সামুদিকে জোনে সাবমেরিন মোতায়েন করতে সক্ষম। চট্টগ্রাম ও আন্দামান সাগরের সমুদ্র পথে সরাসরি প্রবেশ করতে পারে এগুলো। এই অবস্থানে থাকার কারণে বাংলাদেশের সাবমেরিন সমুদ্রপথের উপর নজরদারি ও উত্তর বঙ্গোপসাগরে কোন ঘটনা, যেমন অবৈধ অনুপ্রবেশ বা দখলের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারে।
দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনায় যেসব বিষয় এসেছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে সাবমেরিনের পুরো জীবনচক্র জুড়ে প্রয়োজনীয় সাপোর্ট দেয়া, গুরুত্বপূর্ণ সাবসিস্টেমগুলো বাংলাদেশে সংযোজন এবং দীর্ঘ-মেয়াদে টিকে থাকার জন্য সম্ভাব্য প্রযুক্তি হস্তান্তর। যৌথ-উদ্যোগ বা অফসেট এরেঞ্জমেন্ট-এর আওতায় বাংলাদেশ স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ ও মিউনেশন যেমন: হোয়াইট শার্ক টর্পেডো উৎপাদন করতে পারবে।
সাবমেরিগুলো দক্ষিণ কোরিয়ার তৈরি অস্ত্রে সজ্জিত হবে। এতে হোয়াইট শার্ক টর্পেডো ছাড়াও সি-স্টার ক্রুজ মিসাইল থাকবে। এসব ক্রুজ মিসাইল সাবমেরিন থেকে উৎক্ষেপন করা যায়। এছাড়া থাকবে স্মার্ট মাইন। পাশাপাশি ভবিষ্যতে টাইগার শার্ক টর্পেডো ব্যবহারের অপশন থাকবে। এতে আরো থাকবে দক্ষিণ কোরিয়ার কমব্যাট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (কে-সিএমএস)। ফলে সাবমেরিনগুলো ট্রার্গেট ট্র্যাকিং, ক্লাসিফিকেশন এবং সমন্বিত ইলেক্ট্রনিক সিস্টেমের মাধ্যমে পাল্টা ব্যবস্থা নিতে পারবে।
সমুদ্রে বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে নজরদারি এবং প্রতিরোধক তৈরি, সমুদ্রে জ্বালানি সম্পদের সুরক্ষা এবং মৎসক্ষেত্র মনিটরিংয়ের জন্য সাবমেরিনগুলো কেনা জরুরি হয়ে পড়েছে। প্রতিবেশি, বিশেষ করে ভারত ও মিয়ানমারের সাবমেরিনের ক্রমবর্ধমান তৎপরতা মোকাবেলায় পানির তলদেশে বিশ্বাসযোগ্য প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো হলো এই কেনাকাটার কৌশলগত লক্ষ্য।
নতুন ৬টি সাবমেরিন সংগ্রহ করা গেলে ক্রুদের বিশ্রাম বা রক্ষণাবেক্ষণের সময়েও নিরবিচ্ছিন্ন টহল এবং গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সম্ভব হবে।
উন্নত সংস্করণের জাং বোগো-ক্লাস সাবমেরিনের পানির নিচে গতিবেগ ২১.৫ নট। সমুদ্রপৃষ্ঠে গতি ১১ নট। এগুলো একটানা ৫০ দিন পানির নিচে থাকতে পারে এবং ১০ নট গতিতে এর পাল্লা ১১ হাজার কিলোমিটার। এতে ৩৩ থেকে ৪০ জন ক্রু থাকতে পারে। এতে রয়েছে ৬টি ৫৩৩ মি.মি. টর্পেডো টিউব। প্রতিটি টিউবে ২টি করে টর্পেডো। সাবমেরিনগুলো বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার মধ্যে জাহাজ-বিধ্বংসী, স্থল হামলা ও এরিয়া-ডিনাইয়াল অপারেশনের জন্য অন্য যুদ্ধ জাহাজকে গোলাবারুদ সরবরাহ করতে পারবে।
জাং বোগো-ক্লাস সাবমেরিনগুলো কেএসএস-আই নামেও পরিচিত। জার্মানি প্রথম এই ডিজেল-ইলেক্ট্রিক সাবমেরিনের ডিজাইন করে। পরে দক্ষিণ কোরিয়ার নৌবাহিনী এগুলো স্থানীয়ভাবে নির্মাণ করে। কোরিয়া সাবমেরিন প্রগ্রামের আওতায় ১৯৮৭ সালে প্রথম এ ধরনের তিনটি সাবমেরিন নির্মাণ করা হয়। এরপর ক্রমাগত আপগ্রেড করা হয়। চলতি শতকের শুরুতে এগুলো ব্যাপকভাবে আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়।
বর্তমানে সাবমেরিনগুলোর সারফেস ডিসপ্লেসমেন্ট প্রায় ১,২০০ টন এবং ডুবন্ত অবস্থায় ডিসপ্লেসমেন্ট ১,৪০০ টনের মতো। এর দৈর্ঘ্য ৫৬ মিটার। তবে রফতানির জন্য চাহিদা অনুযায়ী ৬১.৩ মিটার পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে। এর ড্রাফট ৫.৫ মিটার। এটি চালানোর জন্য রয়েছে চারটি এমটিইউ টাইপ ৮ভি৩৯৬ এসই ডিজেল ইঞ্জিন এবং একটি সিমেন্সের তৈরি ৫,০০০ শ্যাফট হর্স পাওয়ার ইলেক্ট্রিক মটর। এর অপারেশনাল ডেপথ ৫০০ মিটার।