দক্ষিণ এশিয়ার সাম্প্রতিক সংঘাতে তুরস্কের তৈরি বায়রাক্টর টিবি২ ড্রোনের পারফরম্যান্সে প্রতিরক্ষা মহল বেশ মুগ্ধ। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর হাতে আছে এই অস্ত্র। এখন শোনা যাচ্ছে নৌবাহিনীও অপারেশনাল কাজে ব্যবহারের জন্য এই ড্রোন কেনার কথা বিবেচনা করছে।
বঙ্গোপসাগরে নজরদারি এবং সম্ভব্য হুমকি মোকাবেলায় বায়রাক্টর টিবি২ ড্রোন কাজে লাগাতে চায় বাংলাদেশ নৌবাহিনী। বাংলাদেশের এই উদ্যোগকে ভূ-রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে দেশটির নৌ সক্ষমতা বৃদ্ধির কৌশলগত পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে মালয়েশিয়াভিত্তিক ওয়েবসাইট – ডিফেন্স সিকিউরিটি এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর বিমান শাখা বায়রাক্টর টিবি২ সংগ্রহে আগ্রহী। তারা বায়রাক্টর টিবি২ ড্রোনের এমন সংস্করণ কিনতে চায় যা ছোট রানওয়ে থেকে পরিচালনা করা যাবে। একই সঙ্গে নৌযান বা ছোট বিমানঘাঁটি থেকে এগুলোর উড্ডয়ন পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হবে।
তুরস্কের বায়কার টেকনোলজি’র ডিজাইন করা বায়রাক্টর টিবি২ বর্তমানে সবচেয়ে উন্নত মিডিয়াম অল্টিটিউড লং এন্ডুরেন্স (এমএএলই) ড্রোনগুলোর একটি।
তুরস্কের প্রথম ড্রোন ক্যারিয়ার ‘টিসিজি আনাদোলু’ থেকে পরিচালনার জন্য মূলত এগুলো তৈরি করা হয়। এগুলো গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, নজরদারি এবং নিখুঁত আঘাত হানার ক্ষমতাসহ ব্যাপকভিত্তিক মিশনে মোতায়েন করা যায়।
বায়রাক্টর টিবি৩ ভেরিয়েন্ট ছোট ডেকে উৎক্ষেপণ এবং নামানো যায়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তুরস্ক থেকে বায়রাক্টর টিবি২ ড্রোনের মোট ১২টি ইউনিট কিনবে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এর মধ্যে ছয়টি ইউনিট ২০২৩ সাল থেকে অপারেশনাল। বাকি ছয়টির শীঘ্রই সেনাবাহিনী হাতে পাবে।
শুধু গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, নজরদারি এবং রেকি (আইএসআর) কাজের জন্যই নয় বরং শত্রুর উপর নিখুঁত আক্রমণ চালানোর কাজেও এগুলো ব্যবহার করা যাবে। এতে প্রচলিত ও অসম যুদ্ধ উভয় ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
ভারতের সাথে বিরোধপূর্ণ সীমান্তে মোতায়েনের জন্য পাকিস্তান মাত্র এক বছর আগে এ ধরনের ড্রোন সংগ্রহ করে।
বাংলাদেশ আত্মরক্ষার জন্য এসব ড্রোন সংগ্রহ করছে। তবে প্রতিবেশী ভারত ইতোমধ্যে এর প্রভাব অনুভব করছে। তারা বাংলাদেশের সাথে তাদের সীমান্তের কাছে এই ড্রোনের উপস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
উদ্বিগ্ন ভারতীয় সামরিক কর্মকর্তারা বলেন যে সীমান্তের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে যেকোনো ইউএভি উড়ানো হলে তা আকাশসীমা লঙ্ঘন বলে বিবেচিত হবে। এর পাল্টা ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দেন তারা।
ভারতের অভিযোগ, ট্রান্সপন্ডার টিবি২আর১০১৭৮ সংকেতের বায়রাক্টর টিবি২ ড্রোন তার মেঘালয়, ত্রিপুরা এবং মিজোরামের সীমান্তের কাছে উড়তে দেখা গেছে।
ঢাকার তেজগাঁও বিমান ঘাঁটি থেকে উৎক্ষেপণ করা এ ড্রোন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬৭তম ডিভিশনের নিয়মিত নজরদারি কার্যক্রমে নিয়োজিত ছিল।
দৃষ্টিসীমার বাইরের উচ্চতায় উড়তে থাকা ড্রোনটি ভারতীয় রাডার সিস্টেম ট্র্যাক করে বলে তারা দাবি করেন।
একজন ভারতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তা দাবি করেন যে ড্রোনটি এমন উঁচু দিয়ে উড়ছিল যে সেটা খালি চোখে দেখা যায়নি। তবে ভারতীয় বিমান বাহিনীর (আইএএফ) রাডারে এর উপস্থিতি ধরা পড়ে।