বাংলাদেশের সাথে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক জোরদারের লক্ষ্যে তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্প ‘সাভুনমা সানাই’-এর প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ডঃ হালুক গোরগুন আগামী ৮ জুলাই বাংলাদেশ সফরে আসছেন। সফরকালে তিনি বাংলাদেশের শীর্ষ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে যৌথ প্রশিক্ষণ, আধুনিক অস্ত্র এবং প্রযুক্তি স্থানান্তর নিয়ে আলোচনা করবেন। তিনি সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসে সঙ্গে সাক্ষাত করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
এই সফরকালে বাংলাদেশ তুরস্কের কাছ থেকে সম্ভাব্য যেসব অস্ত্র কিনতে পারে: ১। তাইফুন ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (পাল্লা ৩০০ কিলোমিটার); ২। আকিনসি কমব্যাট ড্রোন; ৩। তুলপার লাইট অ্যাটাক ট্যাঙ্ক ও সাঁজোয়া যান; ৪। অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক গাইডেড মিসাইল সিস্টেম। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তুরস্কের সঙ্গে জোরদার প্রতিরক্ষা সম্পর্ক ‘ফোর্সেস গোল ২০৩০’ বাস্তবায়নের পথে দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার ইংগিত দেয়। তারা বলছেন বাংলাদেশের নতুন ‘কিল চেইন’ প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
সামরিক পরিভাষায় ‘কিল চেইন’ হলো শত্রু বিনাশ করার জন্য একটি সমন্বিত ব্যবস্থা। এর চারটি ধাপ: টার্গেট চিহ্নিত করা; টার্গেট ধ্বংসের উদ্দেশ্যে বাহিনী প্রেরণ; আক্রমণের নির্দেশ ও টার্গেট ধ্বংস।
‘ফোর্সেস গোল ২০৩০’-এর আওতায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ইতোমধ্যে তুরস্কের তৈরি টিআরজি-৩০০ কাপলান গাইডেড মাল্টিপল লঞ্চ রকেট সিস্টেম সংযোজন করা হয়েছে। তুর্কি বাহিনী এই সিস্টেম সিরিয়া ও ইরাকের যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার করেছে। বাংলাদেশ ২০২১ সাল থেকে তুরস্কের রোকেতসানের তৈরি ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য ট্যাকটিক্যাল মিসাইল সিস্টেম টিআরজি-৩০০/২০০ ব্যবহার করছে । এই সিস্টেমের অন্তত ১৮টি লাঞ্চার, রিলোড ট্রাক, মোবাইল কমান্ড পোস্ট এবং সহায়ক লজিস্টিক ভেহিকেল কেনা হয়েছে।
এগুলো কিনতে বাংলাদেশকে প্রায় ৬০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে হয়। এই ক্রয় সামরিক বাহিনীকে আরো সক্ষম করে তোলার পাশাপাশি তুরক্ষের সঙ্গে দেশটির সামরিক সম্পর্কেও আরো জোরদার করেছে।
টিআর-৩০০ কাসিরগা ক্ষেপনাস্ত্র ১৯০ কেজি পর্যন্ত হাই-এক্সপ্লোসিভ ফ্রাগমেন্টেশন ওয়ারহেড বহনে সক্ষম। আইএনএস/জিএনএসএস ডুয়েল গাইডেড সিস্টেম চালিত এই ক্ষেপনাস্ত্র দিয়ে ফ্রন্টলাইনের অনেক পেছনে শত্রুর বিমানপ্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, লজিস্টিক হাব ও কমান্ড পোস্টে নিখুঁত হামলা চালানো সম্ভব। মোবাইল ট্রাকে বসে এই আক্রমণ চালানো যায়। শত্রুর ইলেক্ট্রনিক ওয়ারফেয়ারের বিরুদ্ধেও এই ক্ষেপনাস্ত্র কার্যকর। বিশেষ করে জিপিএস জ্যামিং ও স্পুফিংয়ের বিরুদ্ধে এটি যুতসই অস্ত্র।
এছাড়াও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তুরস্কের তৈরি ১২টি বেরাকতার টিবি২ মিডিয়াম অলটিচিউড লং এনডুরেন্স (এমএএলই) ড্রোন কিনেছে। যার ছয়টি ২০২৩ সাল থেকে অপারেশনাল। বাকিগুলো শীঘ্রই দেশটি হাতে পাবে।
বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে কৌশলগত সীমান্ত এলাকায় এসব ড্রোন মোতায়েন করেছে। যদিও এগুলো পুরোপুরি আএসআর (ইন্টেলিজেন্স, সারভেইল্যান্স ও রিকনাইস্যান্স) বা প্রতিরক্ষামূলক অপারেশনে ব্যবহার করা হচ্ছে কিন্তু তা ভারতের নিরাপত্তা মহলে বেশ অস্বস্তি তৈরি করেছে। দেশটি মেঘালয়, ত্রিপুরা বা মিজোরামের আকাশে বাংলাদেশী ড্রোন দেখা গেলে তা ধ্বংস করার হুমকিও দিয়েছে।
তুর্কি সিস্টেমের পাশাপাশি ঢাকা নিজস্ব তৈরি সি৪আইএসআর আপগ্রেড করা এবং চীন থেকে ডব্লিউএস-২২ এমএলআরএস, নোরা বি-৫২ সেলফ-প্রোপেলড কামান সংগ্রহ করেছে।
ভূ-কৌশলগত দৃষ্টিকোণ থেকে তুরস্কের সঙ্গে বাংলাদেশে উষ্ণ প্রতিরক্ষা সম্পর্ক আঙ্কারার বৃহত্তর ‘এশিয়া এনিউ’ নীতির সঙ্গে ভালোভাবে মিলে যায়। আঙ্কারা দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিক্ষা সম্পর্ক জোরদারে আগ্রহী। এই সম্পর্ক বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার নতুন নিরাপত্তা পরিবেশে ভালোভাবে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করবে।