হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প এবং পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের মধ্যে বিরল বৈঠকের মাত্র কয়েকদিন পরেই – মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দিতে পাকিস্তানের সুপারিশ ভারতে আরেকটি উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এতে মনে হয় নয়াদিল্লির বদলে ইসলামাবাদ এখন ওয়াশিংটনের কৌশলগত অনুগ্রহ ফিরে পাচ্ছে।
ট্রাম্পকে মনোনয়ন দিতে পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ইসহাক দার, ২১ জুন, আনুষ্ঠানিকভাবে নোবেল কমিটির কাছে সুপারিশ করে চিঠি পাঠান। চিঠিতে তিনি সাম্প্রতিক পাক-ভারত উত্তেজনার সময় যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ট্রাম্পের ভূমিকার প্রশংসা করেন। দার ট্রাম্পকে “সমালোচনামূলক এবং বাস্তববাদী কূটনীতির” কৃতিত্ব দেন, যা বৃহত্তর সংঘাত এড়াতে সাহায্য করেছিল। ট্রাম্পের হস্তক্ষেপকে “অসাধারণ রাষ্ট্রনায়কোচিত” একটি কাজ হিসাবে বর্ণনা করেন দার।
গত সপ্তাহে ট্রাম্পের আমন্ত্রণে জেনারেল আসিম মুনির হোয়াইট হাউজে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন। ইসলামাবাদে বেসামরিক সরকার থাকার পরও হোয়াইট হাউসে প্রথমবারের মতো কোনও পাকিস্তানি সামরিক নেতাকে স্বাগত জানানো হলো। এটি সাধারণ কোন বিষয় নয়। দুই পারমাণবিক প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনা প্রশমন করেছেন বলে ট্রাম্প যে দাবি করে আসছেন এই বৈঠককে তার প্রতি প্রতীকী সমর্থন হিসেবে দেখা হচ্ছে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মুনিরের প্রতি ট্রাম্পের এই উষ্ণতা এবং নোবেল মনোনয়নের সুপারিশ ট্রাম্পের দাবিকে আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে তৈরি বলে মনে হচ্ছে। ট্রাম্প দেখাতে চাচ্ছেন যে তার ব্যক্তিগত কূটনীতি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে প্রকাশ্য সংঘাত রোধে সহায়তা করেছে।
এতে দিল্লির কপালে চিন্তার ভাজ পড়েছে।
ট্রাম্পকে নোবেল পুরস্কারের জন্য সুপারিশ করার একদিন পরই ইসলামাবাদ, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন বিমান হামলাকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলে আনুষ্ঠানিকভাবে নিন্দা জানায় এবং এটা “এই অঞ্চলের জন্য মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে” বলে সতর্ক করে দেয়।
যদিও দিল্লি বারবার ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতার দাবিকে ভুল বলে খারিজ করে দেয়।
রাজনৈতিক ভাষ্যকার নীলাঞ্জন মুখোপাধ্যায় বলেন, ওয়াশিংটন পাকিস্তানের সাথে ভারতকে একই অবস্থানে রাখায় দিল্লি বেশ অস্বস্তিতে রয়েছে। এতে কাশ্মীর সমস্যা আন্তর্জাতিক এজেন্ডায় ফিরে আসার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। তখন, বিরোধটি সম্পূর্ণ দ্বিপাক্ষিক বলে ভারত এতদিন যে প্রচার চালিয়ে আসছে সেই অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়বে।
মুখোপাধ্যায় বলেন, ভারত চেষ্টা করছে, কিন্তু ট্রাম্প খুবই দুর্বোধ্য, তার সাথে যোগাযোগ করা খুবই কঠিন। তিনি বিশ্ব নেতাদের মধ্যে সবচেয়ে অনিশ্চিত আচরণ করছেন।
যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা অব্যাহত রয়েছে। ইসলামাবাদ তার আকাশসীমায় ভারতীয় বিমান চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়িয়েছে। অন্যদিকে, কয়েক দশক ধরে চলা সিন্ধু পানি চুক্তি পুনর্বহাল না করার অঙ্গীকার করেছে দিল্লি। পাকিস্তানের কৃষি এই নদীর পানির উপর নির্ভরশীল।
কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, ইরানের সাথে দ্বন্দ্বের কারণে আঞ্চলিক সমর্থন আদায়ের জন্য ওয়াশিংটন যে প্রচেষ্টা চালায় তারই অংশ মুনিরের সাথে ট্রাম্পের বৈঠক। ইসরায়েল এবং ইরান যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে বলে মঙ্গলবার (২৪ জুন) ঘোষণা করেন ট্রাম্প।
তাই পর্যবেক্ষকরা ওয়াশিংটনের সাথে পাকিস্তানের যোগাযোগ ও ট্রাম্পকে সুপারিশ করার পেছনে লেনদেনের সম্ভাবনা দেখছেন।
জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক উদয় চন্দ্র যদিও মনে করেন যে উভয়ের মধ্যে যেকোনো চুক্তি অর্থনৈতিক সহায়তা এবং সম্ভবত প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। তবে এতে আগের মতোই কোন তদারিক থাকবে বলে মনে হয় না।
২০১১ সালে পাকিস্তানে ওসামা বিন লাদেনকে খুঁজে বের করে হত্যা করার পর ইসলামাবাদের উপর চাপ সৃষ্টির জন্য দিল্লি দীর্ঘদিন ধরে ওয়াশিংটনকে প্ররোচিত করে আসছে। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন যে এখন আমেরিকার সেদিকে মনযোগ নেই।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট