ট্রাম্পকে খুশি রাখতে প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়াবে ন্যাটো

ট্রাম্পকে খুশি রাখতে প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়াবে ন্যাটো

চলতি মাসের ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনের আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে খুশি রাখতে, সংস্থাটির প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর চুক্তি এগিয়ে নিতে চান মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ। এএফপি

ট্রাম্পের দাবী, আগামী ২৪-২৫ জুন নেদারল্যান্ডসে অনুষ্ঠেয় শীর্ষ বৈঠকে জোট সদস্যরা যেন তাদের জিডিপির পাঁচ শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় নির্ধারণ করে। তবে এমন উচ্চমাত্রার ব্যয় চাপ অনেকের জন্যই বাস্তবসম্মত নয়।

এই প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার (৫ জুন) একটি আপসের প্রস্তাব দিয়েছেন ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটে। তাঁর পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, ২০৩২ সালের মধ্যে প্রতিটি সদস্য দেশ জিডিপির ৩.৫ শতাংশ সামরিক খাতে এবং আরও ১.৫ শতাংশ নিরাপত্তা অবকাঠামোসহ সংশ্লিষ্ট খাতে ব্যয় করবে।

কয়েকজন কূটনৈতিক জানায়, রুটের প্রস্তাবটি জোটের ভেতরে ব্যাপক সমর্থন পাচ্ছে। তবে কিছু সদস্য এখনো দ্বিধায় রয়েছেন।

রুটে অবশ্য আত্মবিশ্বাসী। বুধবার তিনি বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি ৩২ সদস্যের এই জোটে বড় একটি প্রতিরক্ষা ব্যয় চুক্তি আমরা করতে পারব।’

ব্যয়ের বিষয়ে জোরালো সংশয় প্রকাশ করেছে স্পেন, কারণ তারা চলতি বছরের শেষ নাগাদ ন্যাটোর বর্তমান লক্ষ্যমাত্রাটি ছুঁতে পারবে যা জিডিপির মাত্র দুই শতাংশ।

কূটনৈতিকরা জানান, শুধু স্পেন নয়, আরও কয়েকটি দেশ চাইছে সময়সীমা কিছুটা বাড়াতে। কেউ কেউ আবার চাইছে, প্রতিবছর ০.২ শতাংশ করে ব্যয় বৃদ্ধির বাধ্যবাধকতাও যেন বাদ যায়।

এই আপসের প্রস্তাবটি বেশিরভাগ সদস্যের কাছেই বাস্তবসম্মত মনে হচ্ছে যা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ‘দাবি পূরণের’ কৃতিত্ব নেওয়ার সুযোগ দেবে।

আসলে এতে ইউরোপের ব্যয়চাপে থাকা মিত্রদের জন্য শর্ত অনেকটাই শিথিল হয়ে যাচ্ছে।

ব্রাসেলসে ন্যাটোর মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে চুক্তিতে রাজি করাতে চাপ দিতে পারেন হেগসেথ। তিনি চান, সবাই যেন প্রস্তাবে সই করেন।

যুক্তরাষ্ট্র রুটের প্রস্তাবে সমর্থন দিয়েছে। তবে বুধবার, ন্যাটোতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন শুধু বক্তব্য নয়, তারা চায় পরিকল্পনা, বাজেট, সময়সীমা ও বাস্তব অগ্রগতির প্রমাণ।

চলতি বৈঠকে রাশিয়ার হুমকি মোকাবেলায় নতুন অস্ত্র সক্ষমতার লক্ষ্যও নির্ধারণ করবে জোট।

ন্যাটো জানিয়েছে, এসব লক্ষ্যমাত্রা পূরণে দেশগুলোর জিডিপির গড় খরচ পড়বে ৩.৫ থেকে ৩.৭ শতাংশ।

হেগসেথ এর আগে ফেব্রুয়ারিতে ন্যাটো বৈঠকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছিলেন। তখন তিনি সতর্ক করে জানান, ওয়াশিংটন ইউরোপে সেনা উপস্থিতি কমিয়ে চীনের দিকে মনোযোগ বাড়াতে পারে।

যদিও এখনো মার্কিন প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়নি। তবু অস্বস্তিতে রয়েছে ন্যাটোর মিত্ররা।

-ইউক্রেন প্রশ্ন-

ন্যাটো প্রতিরক্ষা ব্যয় চুক্তির দিকে এগিয়ে গেলেও, এখন আরেকটি জটিল বিষয় সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। তিন সপ্তাহের মধ্যে অনুষ্ঠিতব্য শীর্ষ সম্মেলনে ইউক্রেনকে নিয়ে সিদ্ধান্ত কী হবে, তা এখন বড় প্রশ্ন হয়ে উঠেছে।

ট্রাম্পের হোয়াইট হাউজে প্রত্যাবর্তনের পর যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ইউক্রেন থেকে সরে গেছে। একইসাথে পশ্চিমাদের সঙ্গে রাশিয়ার তিন বছরের যুদ্ধ মোকাবেলার কৌশলও পুরোপুরি পাল্টে দিয়েছে।

বুধবার, ইউক্রেন-সমর্থক দেশগুলোর এক বৈঠকে অংশই নেননি হেগ। এই বার্তায় স্পষ্ট হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র এখন কিয়েভ থেকে একদমই আলাদা।কক

কিয়েভের ইউরোপীয় মিত্ররা জোর দিয়ে চায়, যুক্তরাষ্ট্রের অনিচ্ছা কাটিয়ে উঠতে এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে সমর্থনের প্রতীক হিসেবে পইপগের শীর্ষ সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানাতে।

ন্যাটো এখনো পর্যন্ত শুধু জানিয়েছে, ইউক্রেন প্রতিনিধিত্ব করবে। তবে জেলেনস্কি উপস্থিত থাকবেন কি না, সে বিষয়ে কিছু বলেনি তারা।