জুলাই যুদ্ধে ভারতীয় ডিপ স্টেট

জুলাই যুদ্ধে ভারতীয় ডিপ স্টেট

ডিপ স্টেট হল অননুমোদিত ও ক্ষমতার গোপন নেটওয়ার্কগুলোর মাধ্যমে ব্যবহৃত এক শক্তি যা সরকারের গভীরে কাজ করে। কিন্তু তা রাজনৈতিক নেতৃত্ব থেকে স্বাধীনভাবে চলে এবং নিজস্ব এজেন্ডা ও লক্ষ্য অনুসরণ করে। গণতান্ত্রিক দেশে (যেমন আমেরিকা) রাজনৈতিক বিভেদ উৎরিয়ে রাষ্ট্রীয় স্বার্থের ভারসাম্য রক্ষা করে এই ডিপ ষ্টেট। আর একনায়করা এটা ব্যবহার করেন তাদের ফরমায়েসী উদ্দেশ্য সাধনে। তবে ডিপ ষ্টেট বেশি ব্যবহৃত হয় পরদেশে নিজেদের স্বার্থ হাসিলে।

গত দেড় দশকের অধিক কাল ধরে বাংলাদেশে সক্রিয় আছে ভারতীয় ডিপ স্টেট। বাংলাদেশকে রাডারের আওতায় রাখতে তাদের প্রত্যক্ষ তৎপরতায়ই সৃষ্টি হয় হাসিনার স্বৈরাচার। তাদের মদদে চলে নির্বাচনী কারচুপি, খুন, গুম ও নির্যাতন। আর জুলাই বিপ্লবেও তাদের ভুমিকা ছিল প্রবল। বিশেষ করে গণহত্যা সংঘটনে। এমনকি নানা জায়গায় গোলাগুলির আওয়াজের সাথে হিন্দি ভাষার যে কথোপকথন শোনা যায় তাও ছিল ঐ ভারতীয় ডিপ স্টেটের অবদান। তবে তাদের সবচেয়ে বড় প্রভাব ছিল আন্দোলনের শেষ ধাপে।

সম্ভবত ০৩ আগস্ট ২০২৪ তারিখেই তারা বুঝতে পারে যে হাসিনার গদি রক্ষা আর সম্ভব নয়। কারণ, ততদিনে ছাত্রদের ০১ দফা ঘোষণা হয়ে গেছে, সব শ্রেনী পেশার মানুষ আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন, অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তারা বিভিন্ন ডিওএইচএসে মিছিল নামিয়েছেন ও সর্বোপরি অফিসারদের দরবারে জুনিয়র অফিসারদের দাবীর সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে সেনাপ্রধানও জনগণের প্রতি গুলি করতে নিষেধ করেছেন। ফলে, শুধু পুলিশ দিয়ে আন্দোলনের দাবানল আর চাপা দেয়া সম্ভব নয়। তখনই তারা বুঝে যায় যে হাসিনার আয়ু শেষ, তবে শুধু একটি মরন কামড় দিয়ে দেখা বাকি।

এসবের প্রেক্ষিতে ঐদিনই হাসিনা তার আত্মীয়দের জানিয়ে দেন No one stay here. ভুল ইংলিশ হলেও তার অর্থ তিনি করতে চেয়েছেন যেন কেউ এখানে না থাকে – অর্থাৎ সবাই দেশ ছেড়ে পালায়। আর নির্বোধ কর্মচারীরা মারামারি করে ও গোলাগুলি চালায় তার গদি রক্ষার শেষ চেষ্টায়। কিন্তু বিধি বাম। বাগড়া দেয় সামরিক বাহিনী।

তবে কিছু দালাল তখনো ছিল সক্রিয়। বিচার এড়ানোর জন্য তড়িঘড়ি করে তারা হাসিনাকে পালাতে সাহায্য করে। ভারতীয় ডিপ স্টেটের সমন্বয় ও নির্দেশে তারা সি-১৩০ এর ট্রান্সপন্ডার বন্ধ করে তাকে নিরাপদে সীমান্ত পার করে। এটা হঠাৎ করা সম্ভব নয়। আগেই ছিল পরিকল্পনা ও সমন্বয়। তবে সম্ভবত করা হয়েছিল মিড লেভেলের কিছু নির্দিষ্ট দাসদের দিয়ে, উপরের কমান্ডের অজান্তেই। নাহলে বাহিনী প্রধানগণ তা জানতেন – সেনাপ্রধানকে বলতে হত না যে হাসিনার পলায়ন সম্পর্কে তিনি জানতেন না।

তবে ভারতীয় ডিপ স্টেট সবচেয়ে বুদ্ধিমত্তার সাথে যে কাজ করে তা হল হাসিনাকে প্রত‍্যাহার ও সাথে বিপ্লবের আগুন স্তিমিতকরন যাতে হাসিনা চলে গেলেও তার রেজিম রক্ষা পায় বা রয়ে যায়। সে লক্ষ‍্যে তারা সম্ভবত এমন এক চ‍্যানেল ব‍্যবাহার করে যার মাধ্যমে রাজনৈতিক দলসমূহ তাদের অজান্তেই ধ্বংসযজ্ঞ কমানোর নামে এই রেজিম রক্ষা কার্যক্রমে পরোক্ষভাবে ব্যবহৃত হয়। তবে যারা যারা এই চেইনে ব্যাবহৃত হয়েছেন তারা কেউই হয়ত তাদের এই Involvement এর ব্যাপারে জানতেন না, বা বুঝে উঠতে পারেন নাই। আর এটাকেই গোয়েন্দা ভাষায় বলে Surreptitious Operation, যেখানে আক্রান্ত বা ব‍্যাবহারকৃত ব্যক্তিগণ বুঝতে পারবেন না যে কি ক্ষতি হয়ে গেল।

তবে এই ক্ষতির ইমপ‍্যাক্ট হল সুদুরপ্রসারী। পরবর্তীতে সরকার গঠন থেকে শুরু করে তার পরিচালনায় এর প্রভাব পড়ে তীব্রভাবে। সংস্কার শুধু ধীরেই হয় না, বরং ব‍্যাক গিয়ার দিয়ে তা বাধাগ্রস্ত করা হয়। ফলে ভারতের শত্রু ডঃ ইউনুসকে ব্যর্থ বলে প্রচার করে দুর্বল করা যায়। তাতে বিপ্লবের যে আকাংখা – বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন, তা বদলিয়ে সামনে চলে আসে নির্বাচন ও রাজনৈতিক সরকার গঠন। পরিস্কার বোঝা যায় যে বিচার ও সংস্কার দ্বিতীয় প্রাইওরিটিতে চলে যায়।

আর এর ফলাফল কি? অতি সহজ উত্তর – পুরনো বন্দোবস্ত টিকে থাকা। পক্ষান্তরে, পুরনো রেজিমের টিকে থাকা বা ফেরত আসা। হোক সেটা হাসিনার মাধ্যমে বা তা না হলে তার দলের কোন উত্তরসূরীর মাধ্যমে। তবে তা করতে ডিপ স্টেটের থাকতে হবে আরো অনেক ভুমিকা। বাংলাদেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে আগেই ভাল ছিলাম বলে জনমত তৈরী করা। আর সে মাঠ তৈরীর কাজ ইতোমধ্যেই চালু হয়ে গেছে। ফলে কিছু কিছু বহুরুপী মুখের চেহারাও স্পষ্ট হচ্ছে।

তবে ভারতীয় ডিপ স্টেটের দুটি ব্যর্থতা স্পস্টঃ

১। ০৫ তারিখে মরন কামড় দিতে ব্যর্থ হওয়া।

২। লেঃ জেঃ মুজিব ও মেঃ জেঃ জিয়াউল আহসান গংদের দিয়ে ক‍্যু করনে অসফলতা।

আর তা ব্যর্থ করেন সেনাপ্রধানের নেতৃত্বে অনেক সার্ভিসিং সিনিয়র অফিসারগণ যারা পুরনো রেজিমে আর ফিরতে চান নাই। এ প্রসংঙ্গে বলা দরকার যে সামরিক চাকুরীতে কোর্ট মার্শাল তথা সংবেদনশীলতার কারনে অনেক কিছুই বলা যায় না। তবে অনুকুল পরিবেশ পেলে সব একত্রে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। জুলাই বিপ্লবেও ঘটেছে তা-ই। জুনিয়রগণ মুখ ফুটে বলতে পেরেছেন তারা জনগণের দিকে গুলি করবেন না। সিনিয়রগণ তাতে নীরব থেকে সমর্থন দিয়েছেন। নাহলে শুধুমাত্র জুনিয়রদের দাবিতেই গুলি না করার আদেশ দিতে পারতেন না সেনাপ্রধান। তিনি পেরেছেন তার নিজের ও (কিছু কুলাঙ্গার বাদে) অন্য সকল সিনিয়র জুনিয়রের সম্মতির কারনেই।

তাই আমাদের উচিত সামরিক বাহিনীকে ঢালাওভাবে দোষারোপ না করা। আর সামরিক বাহিনীর উচিত সব কুলাঙ্গারদের বিচারের আওতায় আনা। তাতেই হবে সকলে মিলে নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন সফল।

*NDJ – Nexus Defence and Justice এর ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া