জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে প্রাধান্য পাবে ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রসঙ্গ

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে প্রাধান্য পাবে ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রসঙ্গ

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে আগামী সপ্তাহে অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বার্ষিক অধিবেশনে বিশ্বের ১৪০ জনেরও বেশি রাষ্ট্রনেতা অংশ নেবেন। এ বছরের অধিবেশনের মূল আলোচ্য বিষয় হবে, ফিলিস্তিন ও গাজা উপত্যকার ভবিষ্যৎ।

এ বৈঠকে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস উপস্থিত থাকতে পারবেন না। কারণ, এতে যোগদানের জন্য তাঁকে ও তাঁর কর্মকর্তাদের ভিসা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ওয়াশিংটন।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায়। জবাবে সেদিন থেকেই গাজা উপত্যকায় তাণ্ডব শুরু করে ইসরায়েল। দুই বছর ধরে সেখানে নির্বিচার হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে তারা। ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজায় যে মানবিক বিপর্যয় চলছে, সেটিই এবারের সাধারণ অধিবেশনের আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে।

আগামী সোমবার থেকে ইসরায়েল–ফিলিস্তিন সংকটের ‘দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান’ প্রশ্নে কয়েকটি বৈঠক হবে। সৌদি আরব ও ফ্রান্স যৌথভাবে এসব বৈঠকে সভাপতিত্ব করবে। এ সমাধানের লক্ষ্য হলো উভয় পক্ষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করা।

গত সপ্তাহে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বিপুল ভোটে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। প্রস্তাবে ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পক্ষে সমর্থন দেওয়ার কথা বলা হয়েছে; যদিও সেখানে হামাসকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। আসন্ন বৈঠকে কয়েকটি দেশ, বিশেষ করে ফ্রান্স আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।

অলাভজনক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের বিশ্লেষক রিচার্ড গোয়ান এটিকে ‘প্রতীকী’ পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তবে তাঁর মতে, ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া দেশগুলো যদি পরে আরও পদক্ষেপ নেয় এবং ইসরায়েলের ওপর গাজায় আগ্রাসন থামানোর জন্য চাপ তৈরি করে, তবে তা সত্যিকার অর্থে তাৎপর্যপূর্ণ হবে।

গোয়ান সতর্ক করে বলেন, ইসরায়েল প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নিতে পারে। তা ছাড়া দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুও সহিংসতার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারেন। নেতানিয়াহু সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। তিনি ইতিমধ্যে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন যে তাঁর মেয়াদকালে কোনো ফিলিস্তিন রাষ্ট্র হবে না।

ইসরায়েলের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতির বিরোধিতা করছে। প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসসহ পুরো ফিলিস্তিনি প্রতিনিধিদলকে ভিসা না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ওয়াশিংটন।

তবে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্টকে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে বক্তব্য দেওয়ার অনুমতি দিতে শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সাধারণ পরিষদে ভোটাভুটি হবে।

আব্বাস যখন বক্তব্য দেবেন, তখন সবার চোখ থাকবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দিকে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে ফেরার পর থেকে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বৈদেশিক সহায়তা ব্যাপকভাবে কমিয়ে দিয়েছেন। বিশ্বজুড়ে মানবিক সহায়তার প্রয়োজন যখন ক্রমে বাড়ছে, তখন জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা তাঁর এ সিদ্ধান্তে বড় ধাক্কা খেয়েছে।

ব্যাপক আর্থিক সংকট আর তীব্র যুদ্ধাবস্থার মধ্যে জাতিসংঘ নীরবে তাদের ৮০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করেছে। নিজেদের সক্ষমতা নিয়ে তীব্র সমালোচনার জবাব দিতেই যেন ব্যস্ত থেকেছে তারা।

মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের অন্তর্বর্তীকালীন নির্বাহী পরিচালক ফেদেরিকো বোরেলো বলেন, ‘বহুপক্ষীয় ব্যবস্থা এখন অস্তিত্ব সংকটে।’ তিনি আরও বলেন, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যদেশগুলোসহ শক্তিশালী সব রাষ্ট্র যখন গুরুতর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘন করে কিংবা এতে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িত থাকে, তখন আন্তর্জাতিক নিয়মকানুন দুর্বল হয়ে পড়ে। গাজা, ইউক্রেন ও আরও অনেক জায়গায় যেমনটা ঘটছে।

ইতিমধ্যে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, মানুষ এখন জবাব ও পদক্ষেপ চাইছে। তারা এমন পদক্ষেপ চাইছে, যা আমাদের পৃথিবীর ভয়াবহ চ্যালেঞ্জের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে, যা বাইরের দুনিয়ার প্রত্যাশার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে।

গাজা, ইউক্রেন, সুদান ও জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব।

প্রায় ১৪০ জন বিশ্বনেতার এ সমাবেশে নতুন মুখ হিসেবে থাকবেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা। এ ছাড়া ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা ও ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানও উপস্থিত থাকবেন।

আল-শারার দিকে সবার নজর থাকবে। প্রায় এক বছর আগে ইসলামপন্থী তাঁর বিদ্রোহী বাহিনী সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট ও স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে। দীর্ঘ প্রায় ১৩ বছরের গৃহযুদ্ধ শেষে দেশ পুনর্গঠনের কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছেন তিনি।

এদিকে অধিবেশনে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির বিষয়টিও আলোচনায় বেশ গুরুত্ব পাবে। ১০ বছর আগে তেহরানের ওপর থেকে যে নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেওয়া হয়েছিল, তা সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে আবারও চালু হতে পারে। গত আগস্টের শেষ দিকে ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও জার্মানির উদ্যোগে এ প্রক্রিয়া শুরু হয়।

গুতেরেস ও প্রেসিডেন্ট লুলা আগামী বুধবার একটি জলবায়ু সম্মেলনেরও আয়োজন করবেন। সেখানে কিছু রাষ্ট্র গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানোর নতুন লক্ষ্য ঘোষণা করতে পারে। ব্রাজিলে অনুষ্ঠিতব্য কপ৩০ জলবায়ু সম্মেলনের মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে এ লক্ষ্য নির্ধারণ করা হবে।

এএফপি