কতিপয় বাংলাদেশীর দেশপ্রেম চট্টগ্রাম বন্দরে আটকে গেছে

কতিপয় বাংলাদেশীর দেশপ্রেম চট্টগ্রাম বন্দরে আটকে গেছে
চট্টগ্রাম বন্দর। ছবি: সংগৃহীত

আমি ইংল্যান্ডের ব্রিস্টল এয়ারপোর্টে প্রায় তিন বছর ধরে চাকরি করছি। গতবছরের শেষের দিকে হঠাৎ শুনলাম এই বিমানবন্দর বিক্রি করে দেবে। অবাক হলাম! সরকারি বিমানবন্দর আবার বিক্রি হবে কিভাবে?

এরপর এটা নিয়ে অনেকের সাথে কথা বললাম, ঘাটাঘাটি করলাম। নিশ্চিত হলাম আসলেই বিমাবন্দর বেচার চেষ্টা চলছে। যদিও দরকার ছিল না জানার। তবুও একটা কৌতূহল ছিল মনের মধ্যে। যেহেতু বাংলাদেশের মানুষ আমি, চোখের সামনে যা দেখেছি সব সরকারি জিনিস। তাই খুব জানার আগ্রহ হচ্ছিল সরকার কিভাবে বিমানবন্দর বিক্রি করে দিচ্ছে!

কিন্তু আরেক দফা অবাক হলাম যখন জানলাম ব্রিস্টল বিমানবন্দরের মালিক আসলে ব্রিটিশ সরকারই না। এমনকি ব্রিটিশ কোনো কোম্পানি বা ব্যক্তিও এটার মালিক নয়। যদিও এই বিমান বন্দর নির্মাণ করেছে ব্রিটিশ সরকার। তারপর সুযোগ বুঝে কারো কাছে বিক্রি করে দিয়েছিল। মূলত বন্দরের বর্তমান মালিক কানাডিয়ান একটা কোম্পানি। যারা শিক্ষকদের পেনশন দেয়। বহির্বিশ্বের অনেক দেশে সরকারি বেসরকারি সকল চাকুরিতেই পেনশন পাওয়া যায়। বেসরকারি পেনশন পরিচালিত হয় থার্ডপার্টি কোম্পানি গুলোর মাধ্যমে। নিয়ম সেই একই। প্রভিডেন্ট ফান্ডে টাকা রাখার মতো।

সুতরাং কানাডিয়ান কোম্পানিটার টাকার অভাব নাই। কিন্তু হঠাৎ অভাব হয়েছিল এবং তারা চিন্তা করলো বন্দর বেচে শিক্ষদের পেনশন দেবে। ব্রিস্টল এয়ারপোর্ট ও লন্ডন সিটি এয়ারপোর্ট সহ ইংল্যান্ডে মোট তিনটা ও ইউরোপে আরো দুইটা এয়ারপোর্ট তাদের মালিকানাধীন। তারা ইংল্যান্ডের তিনটা এয়ারপোর্ট একসাথে বিক্রি করতে চেয়েছিল যে কারণে পরে আর বিক্রি করতে পারেনি। কিনলে তিনটাই কিনতে হবে নইলে একটাও না। এত দাম দিয়ে কিনবে কে? ক্রেতা পাওয়া যায়নি।

ব্রিস্টল এয়ারপোর্টের মেইন কিছু অপারেশন নিয়ন্ত্রিত হয় ব্রিটিশ সরকার দ্বারা নিয়োগকৃত লোকদের মাধ্যমে। সেই সরকারি কোম্পানি/এজেন্সির নাম “RMS”। যেটার কাগজে কলমে কোনো অস্তিত্ব আমি খুঁজে পাই নি। ইমিগ্রেশনের জন্যও কাজ করে সরকারি এজেন্সি। যারা সরাসরি হোম অফিস থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত। এদিকে ব্রিস্টল এয়ারপোর্ট তাদেরকে অফিস ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করে। মালিক কর্তৃপক্ষ সকল কোম্পানিকে রেভিনিউ অনুযায়ী বছরে একটা বড় অংকের কমিশন দেয়। আবার কিছু কিছু কোম্পানিকে তারা পার্শিয়ালি স্পনসর করে। ধারণা করি বেতন ভাতাদির বিষয়ে সরকারের সাথে তাদের স্থায়ী চুক্তি আছে।

সরকার নিয়োগকৃত কর্মকর্তা কর্মচারীরা বেতন ও পেনশন পায় সরকারি স্কেলে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি না থাকলে সরকারি কোম্পানিটার অধীনে কেউ চাকরির আবেদন করতে পারছে না। কারণ এয়ারপোর্টের চাকরিতে ভেটিং প্রোসেস খুব জটিল। তাছাড়াও সরকার এখন স্থানীয়দের বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। এর বাইরে এয়ারপোর্টের ভালো মন্দ সুবিধা অসুবিধা ও উন্নয়নের সব কাজ করে মালিক পক্ষ অর্থাৎ কানাডিয়ান কোম্পানি। তারা শুধুমাত্র ভালো একটা রিভিনিউ আশা করে। আফটার অল এইটা একটা লাভজনক বিজনেস।

ব্রিস্টল বিমানবন্দরের সবচেয়ে বড় গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং কোম্পানিও সুইজারল্যান্ডের। আগে এটার দায়িত্বে ছিলো আরব আমিরাতের শেখদের মালিকানাধীন একটা কোম্পানি। এর বাইরে বিভিন্ন কাজের দায়িত্বে আছে ব্রিটিশ ও ভিনদেশী অন্যান্য কোম্পানিগুলো।

চট্টগ্রাম বন্দর কিন্তু বিক্রি করা হচ্ছে না। শুধুমাত্র একটা হ্যান্ডেলিং কোম্পানির কাছে লিজ দেয়া হচ্ছে। যেটা মূলত আরব আমিরাতের একটা কোম্পানি।

এখানে আরো একটা বিষয় বলে রাখি। যখন ব্রিস্টল এয়ারপোর্ট বিক্রির জন্য মার্কেটে তোলা হলো তখন স্টাফরা চেয়েছিল এটা যেন আরবদেশের কোনো কোম্পানি কিনে নেয়। কারণ তারা খুব ভালো বেতন দেয় এবং তাদের ম্যানেজমেন্ট আরো হাই লেভেলের। কিন্তু শেষ মেষ তো বিক্রি হলো না। আমার ধারণা এর পরেই ওয়েলস ও অস্ট্রেলিয়ার আলাদা দুটি কোম্পানি কিছু শেয়ার কিনেছে। যদিও আমি শিওর না ওরা আগে থেকেই শেয়ারহোল্ডার ছিল নাকি পরে শেয়ার কিনেছে।

দুনিয়া কোথা থেকে কোথায় চলে গেছে আর কতিপয় বাংলাদেশীদের দেশপ্রেম চট্টগ্রাম বন্দরে আটকে গেছে। খুবই হতাশাজনক!

আমার তো মনে হয় বাংলাদেশের ঢাকা বিমানবন্দরটাও বিদেশিদের হাতে দিয়ে দিলে স্টাফ ও যাত্রী সকলেই অন্তত সভ্যতা জিনিসটা শিখতে পারতো। ম্যানেজমেন্টের কথা নাই বা বলি।

https://www.facebook.com/share/p/1Wzy1qmvVn/