এলওসিতে পাকিস্তানের জেড-১০এমই মোতায়েন, ভারতের অ্যাপাচি আধিপত্য খর্ব

এলওসিতে পাকিস্তানের জেড-১০এমই মোতায়েন, ভারতের অ্যাপাচি আধিপত্য খর্ব

চীন থেকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সংগ্রহ করা জেড-১০এমই এ্যাটাক হেলিকপ্টারগুলো কাশ্মিরের নিয়ন্ত্রণ রেখায় (এলওসি) ভারতের অ্যাপাচি বহরকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। জেড-১০এমই বহরকে সাম্প্রতিক সময়ে ইসলামাবাদের রোটারি-উইং অস্ত্রাগারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদের একটি হিসাবে চিহ্নিত করেছেন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা।

আঞ্চলিক বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে ডিফেন্স সিকিউরিটি এশিয়া জানায়, এলওসিতে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার মাত্র দ্রুততম সময়ে পাকিস্তান সেখানে জেড-১০এমই মোতায়েন করে। কাশ্মীরের দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলের পরিবেশগত বাস্তবতার সাথে মিল রেখে এই মোতায়েন পাকিস্তানের যুদ্ধ প্রস্তুতির নতুনা তুলে ধরেছে।

পাকিস্তান এমন এক সময়ে এই উদ্যোগ নিয়েছে যখন বৃহত্তর দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা দৃশ্যপটে দ্রুত পরিবর্তন ঘটছে। যখন পাকিস্তানের কিল-চেইন আধুনিকীকরণে আরও গভীরভাবে যুক্ত হয়েছে বেইজিং। ভারতও তার অ্যাপাচি এএইচ-৬৪ই বহরকে শক্তিশালী করছে এবং পরবর্তী প্রজন্মের দেশীয় অস্ত্র তৈরির দিকে নজর দিয়েছে।

তবে যুদ্ধক্ষেত্রে পাকিস্তানের জেড-১০এমই মোতায়েন নিয়ে জল্পনা বিষয়ে ইসলামাবাদ বা বেইজিং এখনো মুখ খোলেনি।

২০২২ সালের দিকে জেড-১০এমই নিয়ে চীনের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে পাকিস্তান। এর আগে, ২০১৮ সালে ইসলামাবাদ ৩০টি টি১২৯ এটিএকে হেলিকপ্টার কেনার জন্য টার্কিশ অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ (টিএআই)-এর সাথে ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করে। এসব হেলিকপ্টারে যুক্তরাষ্ট্রের হানিওয়েল-রোলস রয়েস ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়। কিন্তু ওয়াশিংটন পাকিস্তানে রফতানির জন্য ইঞ্জিনের লাইসেন্স দিতে অস্বীকৃতি জানায়। যুক্তরাষ্ট্রের চাপে তুরস্ক চুক্তি বাতিল করতে বাধ্য হয়। ফলে পাকিস্তান বুঝতে পারে পশ্চিমা প্রযুক্তির যুদ্ধ সরঞ্জাম সংগ্রহের বিষয়টি কতটা নাজুক। তখনই তারা বেইজিংয়ের দিকে মুখ ফেরায়।

পাকিস্তান কয়েক দশক ধরে এএইচ-১এফ কোবরা হেলিকপ্টার ব্যবহার করে আসছে। এর বিপরীতে, জেড-১০এমই সমসাময়িক যুদ্ধক্ষেত্রের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। ক্লোজ এয়ার সাপোর্ট, ট্যাঙ্ক-বিরোধী অভিযান এবং সীমিত পরিসরে আকাশ যুদ্ধের উপযোগী এটি ডিজাইন করা হয়। ফলে জেড-১০এমই ভারতের এএইচ-৬৪ অ্যাপাচি গার্ডিয়ানের মতো একই কৌশলগত শ্রেণীতে উন্নীত হয়।

জেড-১০এমই তৈরি করে চাংহে এয়ারক্রাফ্ট ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (সিএআইসি)। এটি এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রি কর্পোরেশন অফ চায়নার (এভিআইসি) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।

জেড-১০এমই’র রয়েছে একজোড়া শক্তিশালী ডব্লিউজেড-৯সি টার্বোশ্যাফ্ট ইঞ্জিন, যার প্রতিটি প্রায় ১,২০০ কিলোওয়াট উৎপাদন করে। এই শক্তি সিয়াচেন হিমবাহ বা কারাকোরাম রেঞ্জের মতো উচ্চতর রণক্ষেত্রে হেলিকপ্টার পরিচালনার জন্য যথেষ্ঠ।

এর ট্যান্ডেম-সিট ককপিট এবং সরু এয়ারফ্রেম রুক্ষ ভূখণ্ডে দ্রুত চালচলের উপযোগী। এর গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল ঊর্ধ্বমুখী-ক্যান্টেড এক্সস্ট সিস্টেম এবং সমন্বিত ইনফ্রারেড সাপ্রেশন ডিজাইন। এতে রাডারে ধরা পড়ার সম্ভাবনা কম।

জেড-১০এমই ঘন্টায় ৩০০ কিলোমিটার পর্যন্ত গতি বজায় রেখে একটানা উড়তে পারে। এটি প্রায় ৬,০০০ মিটার উচ্চতায় উঠতে পারে, যা হিমালয়ের শৈলশিরা এবং গভীর উপত্যকা পারি দেয়ার জন্য যথেষ্ঠ।

এর অস্ত্র ও গোলাবারুদের মধ্যে রয়েছে একটি ২৩ মিমি নোজ-মাউন্টেড ক্যানন। দুপাশের স্টাব উইংসে আছে চারটি করে হার্ডপয়েন্ট। এগুলোতে ১৬টি এইচজে-১০ বা একেডি-১০ অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক গাইডেড মিসাইল, সাত বা বত্রিশটি টিউবসহ রকেট পড এবং পয়েন্ট ডিফেন্সের জন্য টিওয়াই-৯০ এয়ার-টু-এয়ার মিসাইল বহন করা যায়।

পাকিস্তানের জেড-১০এমই মোতায়েনের অর্থ হলো আগামীতে ভারতের অ্যাপাচি স্কোয়াড্রন আর নিয়ন্ত্রণ রেখায় আধিপত্য উপভোগ করতে পারবে না। পাকিস্তান এই প্লাটফর্মগুলোকে ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারলে সেটা বেইজিংয়ের জন্য শক্তিশালী বিপণন প্রচারণা হিসেবেও কাজ করবে। তখন তারা এই ধরনের হেলিকপ্টারকে ‘যুদ্ধ-প্রমাণিত’ হিসাবে প্রচার করতে পারবে। এগুলোকে আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য এবং মধ্য এশিয়ার উদীয়মান বাজারগুলোতে পশ্চিমা মডেলের একটি বিশ্বাসযোগ্য, তুলনামূলক সস্তা বিকল্প হিসাবে উপস্থাপন করতে পারবে।