ইরানের পরমাণু ইস্যুতে নেতানিয়াহু-ট্রাম্প উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়

ইরানের পরমাণু ইস্যুতে নেতানিয়াহু-ট্রাম্প উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়
ছবি: সংগৃহীত

ইরানের পরমাণু ইস্যুতে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়েছে। ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ইস্যুতে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য ওয়াশিংটন ও তেহরান আলোচনা নিয়ে গত সপ্তাহে তাদের মধ্যে টেলিফোনে এই উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়।

ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম ‘ইসরাইল টাইমস’-এর বরাত দিয়ে এএফপি মঙ্গলবার (২৭ মে) এই খবর প্রকাশ করে।

বরাবরই নেতানিয়াহুর সঙ্গে ট্রাম্পের দহরম-মহরম সম্পর্ক দেখা গেছে। তবে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে গাজায় ইসরাইলের সামরিক আগ্রাসন ও অবরোধ এবং ইরান ইস্যুতে সম্পর্কে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে পরমাণু ইস্যুতে ইরানকে কীভাবে মোকাবিলা করা হবে তা নিয়ে দ্বন্দ্ব প্রকট আকার ধারণ করেছে।

ইসরাইলের চ্যানেল ১২-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফোনালাপে ট্রাম্প নেতানিয়াহুকে বলেছেন, তিনি ইরানিদের সাথে একটি কূটনৈতিক সমাধান চান।

তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি, ইরানের সঙ্গে একটা ভাল চুক্তি করার সক্ষমতা আমার আছে।

একটি সম্ভাব্য চুক্তি উভয় পক্ষের স্বার্থ রক্ষা করবে বলে তিনি জোর দিয়ে উল্লেখ করেন।

ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় নেতানিয়াহু ও ট্রাম্পের মধ্যে উত্তেজনাপূর্ণ ফোনালাপের খবর অস্বীকার করলেও প্রায় একই ধরনের তথ্য দিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওস।

হোয়াইট হাউসের একজন কর্মকর্তা এবং একটি সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে ইসরাইল টাইমস জানায়, গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নেতানিয়াহুকে ফোনে সতর্ক করে বলেছেন, নেতানিয়াহু যেন এমন কোনো পদক্ষেপ না নেন যাতে সম্ভাব্য পরমাণু চুক্তি নিয়ে ওয়াশিংটন-তেহরান আলোচনা বিপন্ন হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হোয়াইট হাউসের ওই কর্মকর্তা বলেছেন, ট্রাম্প ও অন্যান্য ঊর্ধ্বতন মার্কিন কর্মকর্তা উদ্বিগ্ন এই কারণে যে, ইসরাইল ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোতে বোমা হামলা চালাতে পারে অথবা অন্য পদক্ষেপ নিতে পারে যা চলমান আলোচনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

সম্প্রতি একাধিক গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ইসরাইল ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোতে হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। যদি মার্কিন-ইরান পরমাণু আলোচনা ভেস্তে যায়, তাহলে এই হামলা চালানো হতে পারে।

সূত্রের বরাতে অ্যাক্সিওস জানিয়েছে, ইসরাইল মনে করে যে, ইরানে একটি সফল হামলার কার্যকর সময় ও সুযোগ শিগগিরই বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কিছু মার্কিন কর্মকর্তা আশঙ্কা করছেন, নেতানিয়াহু ট্রাম্পের ‘সবুজ সংকেত’ ছাড়াই হামলার নির্দেশ দিতে পারেন।

হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তার বরাতে অ্যাক্সিওস জানায়, ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর এই ফোনালাপ হয় গত বৃহস্পতিবার। এর একদিন আগে ওয়াশিংটনে একটি মিউজিয়ামের বাইরে গুলির ঘটনা ঘটে, যেখানে দুই ইসরাইলি দূতাবাস কর্মী নিহত হয়।

ওই কর্মকর্তার মতে, নেতানিয়াহুকে ট্রাম্পের বার্তা হলো, ‘তিনি চান না যে নেতানিয়াহু এমন এক সময়ে কোনো ঝামেলা করুন যখন তিনি (ট্রাম্প) সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছেন।’

তবে ট্রাম্প এ কথাও বলেছেন, আলোচনা ভেস্তে গেলে ‘বিকল্প ব্যবস্থাও’ টেবিলে রয়েছে। তবে তিনি প্রথমে দেখতে চান যে কূটনৈতিক সমাধান সম্ভব কিনা।

অ্যাক্সিওস জানিয়েছে, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

পরমাণু ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে এখন পর্যন্ত পাঁচ দফায় পরোক্ষ আলোচনা হয়েছে। সবশেষ গত শুক্রবার ইতালির রাজধানী রোমে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচির সাথে পরোক্ষ বৈঠকে যোগ দেন ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ। ওই বৈঠকের পর ট্রাম্প বলেছেন, আলোচনায় বেশ ‘অগ্রগতি’ দেখা গেছে এবং চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে তিনি এই বিষয়ে ‘সুসংবাদ’ পেতে পারেন।

এদিকে একমার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, ট্রাম্প চান যুক্তরাষ্ট্রের সাথে নেতানিয়াহু একই অবস্থানে থাকুক।

ইরানকে মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের অবস্থান একই হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টি নোয়েম। এই বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি বার্তা ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কাছে পৌঁছে দিয়েছেন বলেও জানান নোয়েম।

গত সপ্তাহে, সংবাদমাধ্যম সিএনএন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, মার্কিন নেতৃত্বাধীন আলোচনা সত্ত্বেও ইসরাইল ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোতে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

ইরান যেকোনো ইসরাইলি আক্রমণের জোরালো জবাব দেয়ার অঙ্গীকার করেছে এবং নেতানিয়াহু মার্কিন কূটনীতিকে দুর্বল করার জন্য কাজ করছেন বলে অভিযোগ করেছে।

ইরানের সাথে পরমাণু ইস্যুতে আলোচনার একটি প্রধান বিষয় হলো ইরানকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার অনুমতি দেয়া হবে কি-না।

মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা চান ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করুক। তেহরান এর তীব্র বিরোধিতা করেছে।