অভিন্ন হুমকি মোকাবেলায় প্রয়োজন বাংলাদেশ-পাকিস্তান সামরিক সহযোগিতা

অভিন্ন হুমকি মোকাবেলায় প্রয়োজন বাংলাদেশ-পাকিস্তান সামরিক সহযোগিতা
পাকিস্তানের সেনাবাহিনী প্রধান ফিল্ড মার্শাল জেনারেল আসিম মুনির এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান (ডানে)। ছবি: সংগৃহীত

অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে ভারত দক্ষিণ এশিয়ায় আধিপত্য বজায় রাখার জন্য বলপ্রয়োগ, চাপ এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের নীতি অনুসরণ করে আসছে। শুরু থেকেই তাদের সামরিক মতবাদে পাকিস্তানকে প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং বাংলাদেশকে বিবেচনা করা হয়েছে নিজের কৌশলগত প্রভাব বলয়ে থাকা একটি পেরিফেরাল বাফার হিসেবে। আজ যখন ভারত একটি উচ্চাভিলাষী সামরিক আধুনিকীকরণ এবং শক্তি প্রদর্শনের পররাষ্ট্র নীতি অনুসরণ করছে, তখন বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সেনাবাহিনী যে অভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে, তা কোনভাবেই উপেক্ষা করার মতো নয়।

ইতিহাসও এই বাস্তবতাকে তুলে ধরে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের হস্তক্ষেপ ছিল পরোপকারের চেয়ে কৌশলগত সুবিধা আদায়ের জন্য। যার লক্ষ্য ছিল পাকিস্তানকে স্থায়ীভাবে দুর্বল করা এবং আঞ্চলিক ভারসাম্য পুনর্গঠন। এর পরের বছরগুলোতে, নয়াদিল্লি বারবার বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছে, সীমান্তে বিদ্রোহী আন্দোলনগুলোকে সমর্থন জুগিয়েছে এবং বাণিজ্য ও নদীর পানিবণ্টনকে চাপ প্রয়োগের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। পাকিস্তানের সঙ্গে গল্পটি প্রকাশ্য যুদ্ধ, সংঘর্ষ এবং ক্রমাগত কূটনৈতিক দ্বন্দ্বের। ঢাকা এবং ইসলামাবাদ উভয়ের ক্ষেত্রে দিল্লির সঙ্গে দ্বন্দ্বের মূল ধরণটি একই: ভারত তার প্রতিবেশীদের বিভক্ত এবং কৌশলগতভাবে কোণঠাসা করে রাখতে চায়।

সংখ্যার দিক দিয়ে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী এগিয়ে। তবে তাদের দায়িত্বও সমানতালে বিশাল। তাদেরকে একই সাথে উত্তরে চীন সীমান্ত, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা অভিযান পরিচালনা এবং পাকিস্তানের সাথে নিয়ন্ত্রণ রেখা জুড়ে মোতায়েন রাখতে হচ্ছে। এই বিস্তৃতি বড় রকমের দুর্বলতা তৈরি করে। এই দুর্বলতাগুলোকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান সহজেই নিজেদের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে।

নদী-বিধৌত বদ্বীপ – বাংলাদেশের সেনাবাহিনী জলাভূমি ও উভচর অভিযানে বিশেষ দক্ষতা অর্জন করেছে। অন্যদিকে, পাহাড় এবং উচ্চভূতিতে যুদ্ধ করার অতুলনীয় অভিজ্ঞতা রয়েছে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর। কাশ্মীর এবং কার্গিলে কয়েক দশক ধরে অপারেশনাল এক্সপোজারের মাধ্যমে এটা অর্জিত হয়েছে। যৌথ প্রশিক্ষণ বিনিময়ের মাধ্যমে এক বাহিনী অন্য বাহিনীর দক্ষতা থেকে উপকৃত হতে পারে। এতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যেকোন পরিস্থিতি ও ভূখণ্ডে যুদ্ধ করার সক্ষমতা নিশ্চিত হবে।

অধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রে ভারত দ্রুত ড্রোন এবং লয়টারিং মিউনিশন মোতায়েনের মাধ্যমে কৌশলগত ভারসাম্যে পরিবর্তন আনছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে তুরস্ক থেকে বায়রাক্তার টিবি২ সিস্টেম সংগ্রহ এবং দেশীয় ড্রোন উন্নয়নের মাধ্যমে কৌশলগত ড্রোন মোতায়েনের ক্ষেত্রে মূল্যবান অপারেশনাল অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। ইলেকট্রনিক যুদ্ধ এবং স্তরযুক্ত বিমান প্রতিরক্ষা সমন্বয়ের ক্ষেত্রে পাকিস্তানের অভিজ্ঞতা ব্যাপক। দুই দেশের এসব অভিজ্ঞতা: কাউন্টার-ড্রোন ডকট্রিন, বিমান হামলা ফাঁকি দেয়া এবং দ্রুত স্থানান্তরের কৌশল ভারতের ক্রমবর্ধমান সক্ষমতাকে সীমাবদ্ধ করবে।

টিকে থাকার ক্ষমতা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভারতীয় কৌশলে ধরে নেয় যে রসদ সরবরাহ পথ বন্ধ করতে পারলে প্রতিপক্ষের শক্তি দ্রুত ফুরিয়ে যাবে। তাহলে, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান চীন ও তুর্কি সিস্টেম গ্রহণ করতে পারে। তখন প্রয়োজনে তারা খুচরা যন্ত্রাংশের মতো সরঞ্জাম ভাগাভাগি করতে পারবে। এছাড়া তারা কম গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের জন্য স্থানীয় থ্রি-ডি প্রিন্টিংয়ে বিনিয়োগ এবং সমন্বয় করে রেডিও, অপটিক্স এবং কাউন্টার-ড্রোন সিস্টেম কিনতে পারে। এ ধরনের পদক্ষেপ খরচ কমাবে, ইন্টার-অপারেবিলিটি বাড়াবে এবং ভারত তখন সমরাস্ত্রের ঘাটতি থেকে সুবিধা নিতে পারবে না।

বাহিনী সুরক্ষা এবং সৈন্যদের বেঁচে থাকার ক্ষমতা সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ভূখণ্ডের গভীরে আঘাত  হানা এবং নেতৃত্ব বিনাশের উপর ভারত জোর দেয়। এর জন্য এমন পাল্টা ব্যবস্থা প্রয়োজন যা বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান একইসাথে উন্নয়ন ঘটাতে পারে। যুদ্ধক্ষেত্রে চিকিৎসা ও যুদ্ধ পরিচালনায় পাকিস্তানের শিক্ষার সাথে দুর্যোগ ত্রাণ ও ব্যাপক হতাহত ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা মিলিত হলে, ঘাঁটি প্রতিরক্ষা, ব্যাপক হতাহত ঘটনায় স্থানান্তর এবং যুদ্ধক্ষেত্রে টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে সেবাদানের জন্য শক্তিশালী যৌথ প্রোটোকল তৈরি করা যেতে পারে।

একটি বাস্তব রোডম্যাপ কল্পনা করা যেতে পারে। এতে স্বল্প-মেয়াদে: কাউন্টার-ড্রোন যুদ্ধ পরিচালনার জন্য একটি যৌথ কর্মী বাহিনী থাকবে, নদী ও পাহাড়ি অঞ্চলে অভিযান পরিচালনার জন্য প্রকৌশলী বিনিময় করা হবে এবং সম্মিলিত চিকিৎসা ও সরবরাহ অনুশীলন অন্তর্ভুক্ত থাকবে। মধ্যমেয়াদে: একটি যৌথ ইউএভি এবং ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার সেন্টার অব এক্সিলেন্স প্রতিষ্ঠা, বিমান প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম নিয়ে সমন্বিত রিভার-ক্রসিং মহড়া চালানো এবং বাছাইকৃত সরঞ্জাম স্ট্যানডারডাইজিং করা। এতে দুই পক্ষের সহযোগিতা আরও গভীর হবে।

প্রতিবেশীদের বিভক্ত রাখার মধ্যেই ভারতের কৌশলগত সুবিধা। তারা পূর্ব দিকে সুবিধা আদায় করতে বাংলাদেশকে চাপ দেয় এবং পশ্চিমে পাকিস্তানের সাথে স্থায়ী বৈরিতা বজায় রাখে। বিচ্ছিন্ন রাখতে পারলে দুই দেশের সেনাবাহিনীকে নিয়েই ভারত বেশ স্বস্তিদায়ক অবস্থায় থাকে। কিন্তু যদি বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান একে অপরের সক্ষমতা বাড়াতে পারে তাহলে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের কৌশলগত সমীকরণও বদলে যাবে। ভারত তখন একাধিক ডোমেন, একাধিক ভূখণ্ড এবং কম অনুকূল পরিবেশে প্রতিপক্ষের সাথে লড়াইয়ে নামতে বাধ্য হবে।

এর জন্য রাজনৈতিক সমঝোতার প্রয়োজন নেই, ইতিহাস মুছে ফেলারও প্রয়োজন নেই। এর জন্য কেবল বর্তমান বাস্তবতাকে মেনে নিতে হবে: ভারত শুধু শক্তিকে সম্মান করে এবং যারা দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতীয় আধিপত্যকে প্রতিরোধ করতে চায় তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

বিডিমিলিটারি.কম থেকে অনুবাদ