অবশেষে অবসরে যাচ্ছে ভারতের ‘ফ্লাইং কফিন’

অবশেষে অবসরে যাচ্ছে ভারতের ‘ফ্লাইং কফিন’

বহু যুদ্ধ এবং ঘটনার সাক্ষী সে। সঙ্গী নানা বিতর্কও। ৬২ বছর পর মিগ-২১ যুদ্ধবিমানকে অবসরে পাঠাচ্ছে ভারতের বিমান বাহিনী। আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামী সেপ্টেম্বরে চণ্ডীগড়ের বিমান বাহিনীঘাঁটি থেকে শেষ বারের মতো উড়বে মিগ-২১ বাইসন যুদ্ধবিমান। তার পর আর কখনও সামরিক বা অসামরিক কোনও কাজে ব্যবহার করা হবে না এই যুদ্ধবিমান।

১৯৬৩ সালে মিগ-২১ যুদ্ধবিমান বিমান বাহিনীর হাতে আসে। ওই বছরেই এটির পরীক্ষামূলক ব্যবহার শুরু হয়। ভারত-রাশিয়া দ্বিপাক্ষিক চুক্তি অনুসারে, এই যুদ্ধবিমান তৈরির কৌশল এবং স্থানীয় ভাবে তৈরির অনুমোদনও নয়াদিল্লির হাতে তুলে দেয় মস্কো। তার পর থেকে প্রায় প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ বা সংঘাতে বিমান বাহিনীর বাহন এবং অস্ত্র হয়ে ওঠে মিগ-২১।

১৯৬৫ এবং ১৯৭১-এর ভারত-পাক যুদ্ধ, ১৯৯৯ সালের কার্গিল যুদ্ধতো বটেই, হালের বালাকোট অভিযান এবং ‘অপারেশন সিঁদুর’-এও এই যুদ্ধবিমান ব্যবহৃত হয়েছে। ২০১৯ সালে মিগ-২১ বাইসন গোত্রের একটি যুদ্ধবিমানকে গুলি করে নামায় পাকিস্তানের যুদ্ধবিমান। আটক করা হয় বিমান বাহিনীর তৎকালীন উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানকে। পরে অবশ্য তাঁকে মুক্তি দেয় পাকিস্তান।

১৯৬০ এবং ১৯৭০-এর দশকে যুদ্ধবিমান হিসাবে মিগের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়লেও পরবর্তী সময়ে বহু দুর্ঘটনার মুখে পড়ে এই যুদ্ধবিমান। ১৯৭০ সালের পর থেকে ওই যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনায় ১৭০ জন পাইলট এবং ৪০ জন সাধারণ মানুষ মারা যান। কেবল ২০১০ আর ২০১৩ সালের মধ্যে ১৩ বার দুর্ঘটনার মুখে পড়ে এই যুদ্ধবিমান। তার পর এই মিগ-২১-এর নামই হয়ে যায় ‘ফ্লাইং কফিন’।

২০০৬ সালের আমির খান, সোহা আলি খান, আর মাধবন অভিনীত বলিউডের বিখ্যাত সিনেমা ‘রং দে বসন্তী’ প্রয়াত বিমান বাহিনী অফিসার অভিজিৎ গ্যাডগিলের জীবন অবলম্বনে তৈরি হয়েছিল। ২০০১ সালে মিগ-২১ ভেঙে মৃত্যু হয় বিমান বাহিনীর ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট অভিজিতের। ছবিতে অভিজিতের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন মাধবন।

ষাটের দশক থেকে বিমান বাহিনীর হাতে এসেছে ১২০০-রও বেশি মিগ-২১ যুদ্ধবিমান। যখন এই যুদ্ধবিমান খ্যাতির মধ্যগগনে, তখন বিমান বাহিনীর ১৯টি স্কোয়াড্রন ৪০০টি মিগ ব্যবহার করত। ২০২৪ সালের একটি পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ভারত মাত্র ৪০টি মিগ ব্যবহার করছে।

২০২২ সালেই বিমান বাহিনীর তরফে জানানো হয়েছিল, আগামী তিন বছরে ধাপে ধাপে এই যুদ্ধবিমানের ব্যবহার কমিয়ে আনা হবে। তৎকালীন বিমান বাহিনীপ্রধান বিআর চৌধরি জানিয়েছিলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে মিগ-২১-এর ব্যবহার বন্ধ করে তার পরিবর্তে এলসিএ মার্ক-ওয়ানএ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করা হবে।

সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী সেপ্টেম্বরে মিগকে বিদায় জানানো হবে বলে মনে করা হচ্ছে।